স্টাফ রিপোর্র্টার, জি নিউজ : দেশে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আর যেন কোন অগণতান্ত্রিক শক্তি সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যবহার করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে না পারে সে জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সজাগ থাকতে হবে। তিনি গতকাল ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণদান কালে এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বাংলাদেশের সংবিধান এবং গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য থাকতে হবে। সংবিধান এবং গণতন্ত্র বিরোধী যে কোন কর্মকাণ্ড সকল শক্তি দিয়ে প্রতিহত করতে হবে। মনে রাখতে হবে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সংগ্রামের বিনিময়ে দেশে আজ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস-এডমিরাল এম ফরিদ হাবিব ও বিমান বাহিনীর ভারপ্রাপ্ত প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল আবু এসরার অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব শেখ মো. ওয়াহিদুজ্জামান, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মাদ জয়নুল আবেদিন ও প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাকুঞ্জে পৌঁছলে তিন বাহিনীর প্রধানগণ ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অব অফিসার লেফটেনেন্ট জেনারেল আবু বেলাল মো. শাফিউল হক তাকে অভ্যর্থনা জানান। অতীতে স্বার্থান্বেষী মহল গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত করতে সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যবহার করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা । সশস্ত্র বাহিনীর পিঠে সওয়ার হয়ে সামরিক শাসন, স্বৈরশাসন এবং সন্ত্রাসের খড়গ নেমে এসেছিল নিরীহ জনগণের উপর। দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রা এসব অপশাসনে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। তিনি বলেন, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক সশস্ত্র বাহিনীকে যে কোন প্রকার অনাকাঙিক্ষত হস্তক্ষেপের ঊর্ধ্বে রাখা হবে। বর্তমান সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে কোন অবস্থাতেই কোনরূপ দলীয় স্বার্থে ব্যবহৃত হতে দেবে না। এই প্রতিষ্ঠানকে এর নিজস্ব ভাবমূর্তিসহ পেশাগত দিক দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য যা-কিছু প্রয়োজন সরকার তা করেছে এবং করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। জাতির এই সন্ধিক্ষণে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র চাই, নাকি গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র চাই।তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত আমাদের সমাজ তাদের হীন অপচেষ্টাকে অবশ্যই প্রতিহত করবে। কোন অশুভ শক্তি পৃথিবীতে স্থায়িত্ব পায়নি। আমি নিশ্চিত যে এবারও পাবে না। তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে সশস্ত্র বাহিনীর সব কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার স্বার্থে একে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা একান্ত অপরিহার্য। শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে সরকার যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে, ঠিক তখনই একটি দুষ্টচক্র পবিত্র ধর্মকে পুঁজি করে এই বিচার প্রক্রিয়া বানচালে উঠে পড়ে লেগেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মান্ধ গোষ্ঠী আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ইসলাম বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করতে নানামুখী অপপ্রচার ও চক্রান্তের জাল বিস্তার করে চলেছে। একথা দিবালোকের মত সত্য যে, আওয়ামী লীগ এদেশের ধর্মভীরু কোমলমতি মানুষের সংগঠন এবং আওয়ামী লীগ ইসলাম ও বাঙালি মুসলমানদের কল্যাণে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে। তিনি বলেন, অতীতের যে কোন সরকারের তুলনায় ধর্মীয় ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের অবদান অনেক বেশি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল দেশকে বিভক্তির দিকে ঠেলে দিতে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিনষ্ট করতে ব্যাপক অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি সামরিক অফিসারদের প্রতি তাদের চক্রান্তের বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
আমার বিশ্বাস আপনারা নিজেদের প্রজ্ঞা, পেশাগত দক্ষতা ও কর্তব্য নিষ্ঠা দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে সশস্ত্রবাহিনীর যাত্রা শুরু হয়েছিল। কাজেই এ বাহিনীর সিনিয়র-জুনিয়র সব সদস্যকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে উঠতে ও জাতির কল্যাণে নিয়োজিত থাকতে হবে। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কোন রকম দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই সশস্ত্র বাহিনীর সকল স্তরে চেইন-অব কমান্ড বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা চেইন-অব কমান্ড জোরদার এবং সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারি ও স্বাভাবিক ক্রাইটেরিয়া রক্ষার যে কোন প্রস্তাব বিবেচনা করবো।
জি নিউজ বিডি.নেট /২৯-০৩-২০১৩