জি নিউজ বিডি ডট নেট ঃ- এমন অনেকে আছেন, যাঁরা চেহারার খুঁত ঢাকতে কসমেটিক সার্জারি করতে চান৷ অথচ জার্মানির জোট সরকার অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে কসমেটিক সার্জারি আইন করে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা করছে৷ ইয়াকবের বয়স ১৫৷ সে নাকের খুঁত দূর করতে কসমেটিক সার্জারি করাতে চায়৷ কারণ নিজের তার নাকটি পছন্দ নয়৷ এ জন্য মানসিক অশান্তিতে আছে সে৷ মা, ছোট ভাই ও এক সমাজকর্মীর সঙ্গে বন শহরের বেসরকারি এক ক্লিনিকে অপেক্ষা করছে সে৷ চিকিৎসকের সঙ্গে এ ব্যাপারে পরামর্শ করতে হবে৷নাকটি পছন্দ নয়–ইয়াকব জানায় আমার নাকটি খুব বড়৷ ‘‘গত বছর এটি ঠিক করার জন্য একটি হাসপাতালে গিয়েছিলাম৷ কিন্তু সেখানকার ডাক্তাররা আমার বয়স কম বলে অপারেশন করতে চাননি৷ এখনও আমি প্রাপ্তবয়স্ক নই, কিন্তু নাকের কারণে আমি মনোকষ্টে আছি৷ আশা করি এখানকার ডাক্তাররা আমাকে সাহায্য করতে পারবেন৷ প্লাস্টিক সার্জন ড. সিপে জানান, ভুক্তভোগী ছেলে বা মেয়ে ও তার অভিভাবকের সঙ্গে কথাবার্তা বলে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, মানসিক চাপটা কতটা গভীরে৷ এছাড়া খুঁতের মাত্রাটাও বিবেচনা করতে হয় আমাদের৷ নাকটা যদি খুব বেশি অস্বাভাবিক না হয়, তাহলে শত অশান্তিতে ভুগলেও কারো নাক অপারেশন করবো না আমি৷ আর অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলে তো প্রশ্নই ওঠে না৷তবে জার্মানিতে ছেলে-মেয়েরা জন্মদিন বা বড়দিনে উপহার হিসাবে কসমেটিক সার্জারির খরচ চেয়েছে, এরকম খবর তিনি শোনেননি৷ শিশুরা কাঁদে কেন –যে কোনো শিশুই চিৎকার করে কেঁদে তার ভূমিষ্ঠ হওয়ার খবর জানিয়ে দেয়৷ তারপরও কারণে-অকারণেই ওরা কাঁদে৷ এই সুন্দর ভুবনের সাথে মানিয়ে নিতে ওদের যেমন কিছুটা সময় লাগে, তেমনই নতুন মা-বাবারও লাগে খানিকটা সময় সব কিছু গুছিয়ে নিতে৷ যা খুবই স্বাভাবিক৷
‘শিশু কাঁদলে, তাকে কোলে তুলে নিন’
আমার কান্না কেউ কি শুনছে না?
মাঝে মাঝে শিশুরা চিৎকার করে ওঠে, বিশেষ করে কাছাকাছি অনেকক্ষণ কোনো শব্দ শুনতে না পেলে৷ অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই হয়ত তখন কাঁদে তারা৷ মজার ব্যাপার, ঐ মুহূর্তে কেউ কাছে গিয়ে কথা বললে বা কোলে তুলে নিলে সাথে সাথেই শিশুদের কান্না থেমে যায়৷
‘শিশু কাঁদলে, তাকে কোলে তুলে নিন’
বাঙালি বাবা–মায়ের সন্তান
দেশে সন্তান জন্মের পর থেকেই সে বাচ্চা কোলে কোলে থাকে৷ বাচ্চা কাঁদুক আর না কাঁদুক৷ নতুন মা সারাক্ষণই তাঁর শিশুটিকে নিয়ে ব্যস্ত আর সেই শিশু সর্বক্ষণই পেয়ে থাকে মায়ের শরীরের উষ্ণতা৷ শিশুকে কোলে নেওয়ার জন্য বাবা-মা ছাড়াও আত্মীয়স্বজন থাকেন৷ এছাড়া, বাচ্চাকে শুধু দেখাশোনা করার জন্য আলাদা লোকও অনেক সময় রাখা হয়৷
‘শিশু কাঁদলে, তাকে কোলে তুলে নিন’
জার্মান শিশু
জার্মানিতে কোনো শিশু কাঁদলেই চট করে কোলো তুলে নেওয়া হতো না কয়েক বছর আগ পর্যন্তও৷ শিশু কাঁদলে ওকে শুইয়ে রাখা হতো৷ এক সময় সেই ছোট্ট শিশু কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পরতো৷ কারণ, মা সারাক্ষণ বাচ্চাকে কোলো নিলে বাড়ির অন্য কাজ কে করবে? রাতে প্রতিদিন ঘড়ি ধরে একই সময়ে বাচ্চাকে বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হতো ঘর অন্ধকার করে৷ বলা বাহুল্য জার্মানিতে গ্রীষ্মকালে প্রায় ১১টা পর্যন্ত বাইরে সূর্যের আলো থাকে৷
‘শিশু কাঁদলে, তাকে কোলে তুলে নিন’
সময় পাল্টেছে, বদলেছে চিন্তাধারা
একদিকে যেমন জার্মানির মতো উন্নত দেশগুলিতে প্রযুক্তি দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনই অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশেরও কিছু বিষয় গ্রহণ করতে শুরু করেছে তারা৷ শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. গেন কামেদা বলেন, পশ্চিমের সংস্কৃতিটা এমন যে শিশুরা মায়ের শরীরের উষ্ণতা কম পায়, কারণ এ দেশে বাচ্চারা বিছানায় বেশি সময় থাকে আর এটাই হয়ত শিশুদের রাতে কান্নাকটি করার বড় কারণ৷
‘শিশু কাঁদলে, তাকে কোলে তুলে নিন’
নতুন বাবা–মা
নতুন মা-বাবার নানা প্রশ্ন, শিশুটির কান্নার কারণ তাঁরা বুঝতে পারেন না৷ ক্ষুধা, শরীর খারাপ, ক্লান্ত নাকি আদর, কি চায় বেবিটি? আসলে শরীরের উষ্ণতা পেলে শিশুরা সব কিছুই ভুলে যায়, যদি না বড় কোনো শারীরিক কষ্ট থেকে থাকে, বলেন ডা. কামেদা৷ তাঁর পরামর্শ, পিতা-মাতা হলে অনেককিছুই বাদ দিতে হয়, তাই বাইরে গেলে শিশুকে কোলে করে সঙ্গে নেবার চেষ্টা করবেন – যাতে শিশুটি শরীরের উষ্ণতা পায়৷
‘শিশু কাঁদলে, তাকে কোলে তুলে নিন’
ডাক্তারের পরামর্শ
নতুন বাবা-মায়ের জন্য ডাক্তার কামেদার আরো পরামর্শ, শিশুর কাছাকাছি থাকুন, শিশুকে সময় দিন, কোলে তুলে নিন৷ অল্প কিছুদিন পরেই দেখবেন, শিশু শুধু কাঁদেই না, বরং খুব শীঘ্রই তারা হাসতে শিখবে, হাসাবে মা-বাবাকেও৷
প্রতিবেদন: নুরুননাহার সাত্তার | সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
রাজনীতিবিদরা সার্জারি নিষিদ্ধ করার পক্ষপাতী–এসপিডি ও ইউনিয়নের স্বাস্থ্যবিমা বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখছেন৷ শারীরিক ও মানসিক কারণে জরুরি প্রয়োজন না হলে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্লাস্টিক সার্জারি নিষিদ্ধ করার পক্ষপাতী তাঁরা৷রাজনীতিকরা আমাদের চেয়ে এই সমস্যাকে বড় করে দেখছেন৷ বলেন ‘সোসাইটি অফ প্লাস্টিক সার্জন’-এর মুখপাত্র ক্যার্সটিন ফন আর্ক৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘রাজনীতিকদের ধারণা, জার্মানিতে প্লাস্টিক সার্জারির ১০ শতাংশ বুঝি করা হয় অপ্রাপ্ত বয়স্কদের৷ কিন্তু আমাদের তথ্য অনুযায়ী এই হার মাত্র এক শতাংশ৷ এর মধ্যে আবার অধিকাংশই করা হয় খাড়া কানকে ঠিক করতে৷”
স্টেফানির পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত কান খাড়া ছিল৷ এক্ষেত্রে মা-বাবাই তৎপর হন৷ মেয়েকে যাতে স্কুলে সহপাঠীদের ব্যঙ্গ বিদ্রূপের শিকার না হয়, তাই তাঁরা আগেই ব্যবস্থা নিতে চেয়েছেন৷ বলেন স্টেফানির মা৷রুটিন অপারেশন–ড. সিপে-এর কাছে এটা একটা রুটিন অপারেশন৷ তাঁর ভাষায়, বস্তুত একে কসমেটিক সার্জারি বলা যায় না৷ কেননা ভুক্তভোগীদের মানসিক কষ্টটা অনেক বেশি৷ প্রায়ই অন্য বাচ্চারা খেপায় তাদের৷ স্কুলে যেতে ভরসা পায় না তারা৷ সামাজিক দিক দিয়েও গুটিয়ে নেয় এই সব ছেলে মেয়ে৷ এই পরিস্থিতিতে একটি অপারেশন যুক্তিসংগত৷”স্টেফানির কানের অপারেশন ঠিকমতোই হয়ে যায়৷ এতে সে খুশি৷ চুলের বেণি করতে আর সংকোচ বোধ হয় না৷ এ জন্য অপারেশন সঠিক সিদ্ধান্তই ছিল বলে মনে করে স্টেফানি৷অপ্রাপ্ত বয়স্কদের কসমেটিক সার্জারির ৮০ শতাংশই হয় কানের৷ কদাচিৎ করা হয় অন্যান্য অপারেশন৷ আইন পরিবর্তন হলেও চিকিৎসকদের কাজে তেমন পরিবর্তন হবে না৷ তবে রোগীদের সামনে আর একটি বাধা পড়বে৷ ছোটাছুটিটা বাড়বে৷ ড. সিপে এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘নতুন আইনের ফলে আমাদের কাজে কোনো পরিবর্তন হবে না৷ যে সব আমরা অপারেশন করে থাকি, সেগুলি চিকিৎসার দিক দিয়ে যুক্তিসম্মত৷ তাই আমাদের আচরণে পরিবর্তন আনার কোনো কারণ দেখি না৷”মিডিয়ার প্রভাব–অন্যদিকে দার্শনিক ডিয়র্ক লানৎসেরাথ মনে করেন প্লাস্টিক সার্জারিকে অনেক আগেই নিয়ন্ত্রণ করা উচিত ছিল৷ প্রথম বিশ্বযু্দ্ধে আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রথম এই সার্জারি চালু হয়৷ এখন সৌন্দর্য বর্ধনেও এই ধরনের অপারেশন করা হয়ে থাকে৷ তাঁর মতে শুধু চিকিৎসক ও রাজনীতিবিদদেরই নয় সমাজেরও এক্ষেত্রে বড় দায়িত্ব রয়েছে৷ কেননা সমাজই মূলত তরুণদের সৌন্দর্যের পেছনে ছুটতে উদ্দীপিত করে থাকে৷ড. ফন আর্ক এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বিশেষ করে অল্পবয়সিরা মিডিয়া দ্বারা প্রভাবিত হয় বেশি৷ নিজেদের শরীরকে আবিষ্কার করে তারা এই বয়সে৷ টেলিভিশনের এ ক্ষেত্রে এক বড় ভূমিকা রয়েছে৷প্লাস্টিক সার্জারিকে এমনভাবে দেখানো যেন দৈনন্দিন ব্যাপার এটি৷ মনে হয় কোনো জটিলতা ছাড়াই বুঝি সম্পূর্ণ হয় কাজটা৷ বাস্তবে কিন্তু সব সময় এমনটি হয় না৷ সূত্র –DW.DE