অনলাইন ডেস্ক :- কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে চিকিত্সকের খোলামেলা কথা বলা জরুরি। ছবিটি প্রতীকীকিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে যৌনতা ও যৌন সমস্যা নিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না চিকিত্সকেরা। এশীয় বংশোদ্ভূত চিকিত্সকদের মধ্যে এ প্রবণতা প্রবল। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে আসা এ চিত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন গবেষকরা। এদিকে, বাংলাদেশে এ পরিস্থিতি আরও মারাত্মক বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশের ভুক্তভোগীদের অনেকেই। চিকিত্সকের কাছে সেবা নিতে গিয়েছে এমন ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ২৫৩ জন কিশোর-কিশোরীর ধারণকৃত অডিও বিশ্লেষণ করা হয়েছে ওই গবেষণায়। এতে দেখা গেছে, এশীয় বংশোদ্ভূত চিকিত্সকেরা কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে যৌনতা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে অন্যান্যদের তুলনায় ৯০ ভাগ কম আগ্রহী। এক খবরে এ তথ্য জানিয়েছে ইন্দো–এশিয়ান নিউজ এজেন্সি।‘জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ সম্প্রতি ওই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গবেষক দলটির প্রধান যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক স্টুয়ার্ট আলেক্সান্ডার। তিনি বলেন, ‘যৌনতা এবং যৌনতা সংক্রান্ত সমস্যাগুলো বুঝতে না পারা কিশোর-কিশোরীদের ওপর এটা ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।’ গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, যে চিকিত্সকেরা এ বয়সের রোগীদের সঙ্গে সাক্ষাতের মাত্র ৬৫ ভাগ ক্ষেত্রে যৌনক্রিয়া ও যৌনতা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে কথা বলছেন। আর এ বিষয়ে কথোপকথন গড়ে মাত্র ৩৬ সেকেন্ড। বাকি ৬৫ ভাগ সাক্ষাতে যৌন সমস্যা নিয়ে কোনো কথাবার্তাই বলেননি চিকিত্সকেরা। তবে, চিকিত্সকেরা ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সঙ্গে যৌনতা বিষয়ক সমস্যা নিয়ে প্রায় দ্বিগুণ কথা বলেন। গর্ভধারণ এবং যৌনতা থেকে রোগে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে মেয়েদের আশঙ্কা বেশি থাকায় এমনটা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন গবেষকেরা। কিশোর-কিশোরীদেরকে যৌন-স্বাস্থ্যের বিষয়ে পরামর্শ দিতে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে চিকিত্সকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ বিষয়ে কথাবার্তা না বললে রোগীদেরকে সহায়তা দেওয়াটা চিকিত্সকদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে বলেও মন্তব্য করেছেন গবেষকেরা। গবেষণার প্রয়োজনে ‘যৌনতা বিষয়ক কথাবার্তা’র একটি সংজ্ঞাও ঠিক করেছিল এ গবেষক দলটি। সে অনুযায়ী ‘যৌনক্রিয়া, যৌনতা, ডেটিং কিংবা লৈঙ্গিক পরিচয় সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন, মন্তব্য ও আলোচনা’কেই এর আওতাভুক্ত ধরা হয়েছে। ‘কিশোর-কিশোরীরা নিজে থেকে ‘যৌন সমস্যার’ প্রসঙ্গটি আনবে ভেবে চিকিত্সকেরা অপেক্ষা করে থাকতে পারেন না, তাঁদেরকে অবশ্যই স্ব-উদ্যোগে এ বিষয়ে কথা বলতে হবে।’ চিকিত্সকদের প্রতি এ আহ্বান জানিয়ে শেষ হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনটি। এদিকে, আমাদের দেশে যৌনতা এবং যৌনতা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে কথা বলাটা সাধারণভাবেই চর্চিত নয় বলে চিকিত্সা ক্ষেত্রেও এ পরিস্থিতি পাশ্চাত্য দেশগুলোর তুলনায় আরও মারাত্মক হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্করাই এ নিয়ে কথা বলতে সংকোচ বোধ করেন। তাই পরিবারে এবং সমাজেও এ নিয়ে কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে কথাবার্তা খুব একটা হয় না। কিন্তু সামাজিক চর্চার এ অচলায়তন ভাঙতে পরিবারের সদস্য এবং শিক্ষকদের পাশাপাশি চিকিত্সকেরা বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারেন। যৌনতা বিষয়ে এমন অস্পষ্টতার শিকার কিশোর-কিশোরীরা কী ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে তা জানিয়েছেন খাজা ইউনূস আলী মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন। তিনি জানান, সাধারণভাবে কিশোরীরা বয়ঃসন্ধিকালে বড় ধরনের মনো-দৈহিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় বলে তাঁদের সমস্যাও বেশি হয়ে থাকে। মা বোন বা পরিবারের অন্য নারীরা বিষয়টি বুঝতে তাকে কিছুটা সহায়তা করে থাকে বটে কিন্তু কিশোরদের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই পরিস্থিতি আরও মারাত্মক হয়। ডা. ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমাদের সংস্কৃতিতে যৌনতা নিয়ে কথা বলায় এক ধরনের অস্বস্তি রয়েছে। তাই অনেক ক্ষেত্রেই বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরদের মনো-দৈহিক পরিবর্তন নিয়ে এমনকি বড় ভাই-বোন, বাবা-মা কেউই সরাসরি কথা বলেন না। ফলে স্কুলের সহপাঠী, পাড়ার বড় ভাই বা এমন অন্য কারও সঙ্গে কথা বলে, কিংবা যথাযথ নয় এমন বইপত্র বা ইন্টারনেটের পর্নো সাইট থেকে এ নিয়ে জানতে আগ্রহী হতে পারে তারা। ফলস্বরূপ তাদের মধ্যে বিকৃতির আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে।
তিনি জানান, ‘যৌনতা এবং যৌনতা সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সঠিকভাবে বুঝতে না পারা থেকে