স্পোর্টস ডেস্কঃ- সাবেক চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ৬ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতল শ্রীলঙ্কা। ভারতের দেয়া ১৩১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারের ১৩ বল হাতে রেখেই ম্যাচ জিতে নেয় লঙ্কানরা। গতকাল রোববার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠান লঙ্কান অধিনায়ক লাসিথ মালিঙ্গা। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই অজিঙ্কা রাহানের বিদায়ে শুরুটা ভালো হয়নি ভারতের। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস তার প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে অজিঙ্কা রাহানেকে সরাসরি বোল্ড করেন। দ্বিতীয় উইকেটে রোহিত শর্মার সঙ্গে কোহলির ৬০ রানের জুটিতে শুরুর ধাক্কা সামাল দেয় ভারত। ব্যক্তিগত ১১ রানে মিডউইকেটে অধিনায়ক লাসিথ মালিঙ্গার হাতে জীবন পান কোহলি। রোহিতকে রান-আউটের সহজ সুযোগও হাতছাড়া করেন মালিঙ্গা। ১১তম ওভারে রোহিত শর্মাকে সাজঘরে পাঠান রঙ্গনা হেরাথ। ২৬ বলে তিন চারে ২৯ রান করেন তিনি। এরপরই পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক কোহলি। যুবরাজের সঙ্গে ৭.৪ ওভারে ৫৫ রানের জুটি গড়েন তিনি। ব্যাট হাতে চরম ব্যর্থ যুবরাজের অবদান ২১ বলে ১১ রান। দলীয় ১১৯ রানে যুবরাজ আউট হলে ক্রিজে নামেন অধিনায়ক ধোনি। তিনি ৭ বলে চার রানে অপরাজিত। আর কোহলি শেষ ওভারের শেষ বলে রান আউট হওয়ার আগে ৫৮ বলে পাঁচ চার ও চার ছয়ে ৭৫ রান করেন। ভারত নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে চার উইকেটে ১৩০ রান করতে সক্ষম হয়। শিরোপা জিততে না পারলেও টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন ভারতের ‘রান মেশিন’ খ্যাত বিরাট কোহলি। শেষ দিকে অফস্ট্যাম্পের বাইরে টানা ইয়র্কার দিয়ে ব্যাটসম্যানদের কাজটা অনেক কঠিন করে তুলেছিলেন মালিঙ্গা, নুয়ান কুলাসেকারারা। কোহলি, মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো বিস্ফোরক ব্যাটসম্যানও তখন সহজে রান পাননি। শেষ ৪ ওভারে মাত্র ১৯ রান করেন ধোনি-যুবরাজরা। ভারতের দেয়া ১৩১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারে মোহিত শর্মার প্রথম বলে তুলে মারতে গিয়ে মিড-অফে জাদেজার হাতে ধরা পড়েন কুশল পেরেরা (৫)। তবে জয়াবর্ধনেকে নিয়ে দলকে ভালো সংগ্রহ এনে দিচ্ছিলেন তিলকরত্নে দিলশান। ১৬ বলে চারটি চারে ১৮ রানে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের শিকার হন তিনি। ৩৬ রানের জুটিটি ভাঙার পর আরেক বিদায়ী তারকা কুমারা সাঙ্গাকারা মাঠে নামেন। তাকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি জয়াবর্ধনে। শেষ ম্যাচে ৪টি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ২৪ বলে ২৪ রানে সুরেশ রায়নার শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। লাহিরু থিরিমান্নে ৭ রানে অমিত মিশ্রর কাছে উইকেট হারান। সাঙ্গাকারাকে যোগ্য সঙ্গ দেন থিসারা পেরেরা। অবিচ্ছিন্ন ৫৪ রানের জুটি গড়ে দলকে জেতান তারা। ১৪ বলে ম্যাচজয়ী বাউন্ডারিসহ দু’টি ছয়ে ২১ রানে টিকে ছিলেন থিসারা। অপর প্রান্তে ৩৫ বলে ছয়টি চার ও একটি ছয়ে হার না মানা ৫২ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরাও হন সাঙ্গাকারা। ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে ৩৬ বছর বয়সী সাঙ্গাকারা বলেন, “দীর্ঘ সময় পর আমরা ফাইনাল জিতলাম। পাঁচটি ফাইনাল আমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। আমি খুশি এ জন্যে যে দলের জন্যে কিছু করতে পেরেছি। আমরা অনেক খুশি। লাসিথের নেতৃত্বে দারুণ টুর্নামেন্ট হয়েছে। অলরাউন্ডিং পারফরমেন্স করেছে তারা। আমার পরিবার ও শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলা আমার জীবনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সবাইকে চলে যেতে হবে। আমারও সময় এসেছে। সাঙ্গাকারা ২০০০ সালের ৫ জুন টেস্টে জার্সি গায়ে জড়ান। ২০০৬ সালে ১৫ জুন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলেন তিনি। প্রথম ম্যাচে ২১ রান করেন। ২০০৬-১৪ পর্যন্ত টানা ৫৫ টি-টোয়েন্টিতে ১৩৮২ রান করেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। কোন শতক না করলেও আটটি অর্ধশতক রয়েছে তার। টি-টোয়েন্টিতে তার সর্বোচ্চ রান ৭৮। তবে এ আসরে শেষ তিন ম্যাচে তিনি মাত্র পাঁচ রান করেন। ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি স্মরনীয় করে রাখলেন তিনি। এ প্রতিবেদন রেডিও তেহরান এর।