জি নিউজ ঃ-গতশুক্রবার আওয়ামী লীগের ৬৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন। চার সিটি কর্পোরেশনে ক্ষমতাসীন জোট সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয়ের ছয় দিনের মাথায় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নির্বাচনে জয়ের আশা প্রকাশ করে বলেছেন, জনগণ সময় মতো ঠিক জায়গায়ই ভোট দেবে। গত ১৫ জুন সিলেট, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জোটের সমর্থিত প্রার্থীরা ১৮ দল সমর্থিত প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জনগণ জানে সময় মতো কাকে ভোট দিতে হবে। আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব, এদিকে চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, যখন নির্বাচনে জিতেছেন তখন কেয়ারটেকার-টেয়ারটেকার করেন কেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবেই। তারা আবার ক্ষমতায় এলে আর ক্ষমতা ছাড়বে না। বর্তমান সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করেছে। এর ফলে নির্বাচিত সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে এবং বর্তমান সরকারই পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে তিনটি নির্বাচনকে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে বিএনপি বলছে, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন এদেশে নিরপেক্ষ হবে না, কারণ এতে প্রশাসন চাপমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারবে না। খালেদা জিয়ার সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পেছনে ‘ষড়যন্ত্র’ থাকার আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে তিনি (খালেদা জিয়া) সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। আবারো সেখানে গেছেন, এসে কোন ষড়যন্ত্র করেন, তা কে জানে। এজন্য দেশবাসীকে সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। গণমাধ্যমে খবর এসেছে, সিঙ্গাপুরে মহাজোটের শরিক ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক হয়েছে। অবশ্য বিএনপি এই অভিযোগ নাকচ করে বলেছে, বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যেই এ ধরনের খবর প্রকাশ করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গত মঙ্গলবার দেশে ফেরেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। আর খালেদা জিয়া একই হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কাছে এখনো চিকিৎসাধীন। আগামী ২৪ জুন তার দেশে ফেরার কথা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা, সারা দেশে বোমা হামলা এবং ক্ষমতায় থাকাকালে যারা অনিয়ম-দুর্নীতি করেছে তারা যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৬৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার বংশ নিয়ে মিথ্যা কথা বলবে। কোরআন পুড়িয়ে রাজনীতি করবে। আর আমরা কোরআন রক্ষা করেও নাস্তিক? এটা কোন ধরনের খেলা? শিলিগুড়িতে যার জন্ম তার বাপ-দাদার পরিচয় কি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে জেলে থাকার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সাথে ছিলাম। কি করে দেখা আছে। যার সকাল হয় ১২টায় উনি নাকি আস্তিক,আমি এর ভার দেশবাসীর কাছে দিলাম। মুসলামান হয়ে তারা কীভাবে ঘুমন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারে । বর্তমান সরকারের সময়ে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, তারা শান্তিতে, ভালোভাবে থাকতে দিতে চায় না। ভাঙা সুটকেস যাদুর বাক্স হলে তো টাকার অভাব হয় না। দুইবার ক্ষমতায় থেকে জনগণের টাকা লুট করেছে। গরীবের সম্পদে লাথি মেরে তারা ধনী হয়েছে। তাই ছেলেকে উত্তমধ্যম দিয়ে মুচলেকা নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিদেশ পাঠিয়েছে। ফেইসবুকে ধর্মীয় অনুভতিতে আঘাত দিয়ে মিথ্যাচারের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা কী ধরনের লোক, সমগ্র জাতিকে বলব তাদের ঘৃণা করুন। তারা মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে কাজ করে। দৈনিক আমার দেশ, নয়া দিগন্ত এবং ইনকিলাব পত্রিকা নবীকে অবমানাকর ব্লগ নিয়ে লিখল। কিন্তু এটা প্রচার করাও তো গুনাহর কাজ। ব্লগে মহানবীকে অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কোরআন পোড়ানোর জবাব খালেদাকে একদিন জাতির কাছে দিতে হবে। আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, , ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাংসদ আব্দুল মতিন খসরু, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, রহমত উল্লাহ, সিমিন হোসেন রিমি প্রমুখ আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।