জি নিউজঃ- নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেছেন হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেবেন, না হলে আপনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিদায় নিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা সত্য, ন্যায়, গণতন্ত্র ও জনগণের পক্ষে আছি, বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত। খালেদা জিয়া বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থাকলে আমরা নির্বাচনে অংশ নেব না। তার মানে কি এই যে হাসিনা একাই নির্বাচন করবেন? সেটাও হতে দেব না।’ খালেদা জিয়া বক্তব্যের শুরুতে বৃষ্টিতে ভিজে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, সরকার কোনো উন্নয়ন করেনি। লুটপাট আর দুর্নীতি করেছে। তাই তারা ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করতে চায়। কারণ ক্ষমতায় থাকলে সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। বক্তব্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন খালেদা জিয়া। তবে বেশির ভাগ অংশজুড়েই ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন প্রসঙ্গ। নৌকার তলা ফুটো হয়ে গেছে, কাজ হবে না খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন হেলিকপ্টারে করে ঘুরে ঘুরে নৌকায় ভোট চান। তিনি ক্ষমতায় থেকে গত সাড়ে চার বছরে দুর্নীতি আর লুটপাট করেছেন। এই করতে করতে নৌকার তলা ফুটো হয়ে গেছে। এখন নৌকায় পানি উঠে ডুবে যাওয়ার অবস্থা। এই নৌকা দিয়ে আর কাজ হবে না। সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক তুললেন কেন?এদিকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নিয়ে দেশব্যাপী জনসংযোগের অংশ হিসেবে গতকাল নরসিংদী বালুর মাঠে এক জনসভায় থেকেই চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতির ডাক দিলেন বিরোধী নেতা । বিকাল পাঁচটা ২০ মিনিট থেকে টানা ৪০ মিনিটের বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দাবি আদায়, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা, নানা প্রতিশ্রুতি ও সরকারের প্রতি গণহত্যা, দুর্নীতি ও ব্যর্থতার দায়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। বিরোধী নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। অনেক আগেই আদালত তাকে রংহেডেড বলে উপাধি দিয়েছিল। মাথা খারাপ হলে তার চিকিৎসা ও বিশ্রাম দরকার। আমরা তার শুভাকাঙক্ষী, আমরা তার ভাল চাই। খালেদা জিয়া বলেন, ডেসটিনি, শেয়ারবাজার, হল-মার্কের টাকা কোথায় গেল? ব্যাংকের টাকা কোথায় যাচ্ছে? কোনো কিছুর বিচার হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘মইনুদ্দিন ফখরুদ্দিন’ ছিল হাসিনার আন্দোলনের ফসল। ওই সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে করা সব মামলা তিনি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করেননি। তিনি বলেন, সরকার ১০ টাকা কেজি চাল দেয়নি, ঘরে ঘরে চাকরি হয়নি। ৩০০ টাকার সার এক হাজার ১৬০ টাকা হয়েছে। কোথাও কোনো উন্নয়ন হয়নি। তিনি বলেন, মতিঝিলে বাতি নিভিয়ে হামলা হয়েছে। দুটি টিভির লাইভ সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওই দিন যে গণহত্যা চালানো হয়েছে, সে জন্য আওয়ামী লীগকে একদিন কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সরকার পাঁচ বছরে দেশের কোনো উন্নয়ন করেনি। আওয়ামী লীগ দেশের সাংবিধানিক সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলেছে। জনগণের জন্য উন্নয়নের সব টাকা সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা লুট করেছে। তিনি বলেন, শুনতে পাচ্ছি সরকারের অনেকেই নাকি কানাডায় বাড়ি কিনেছে। সময় হলে তারা দেশ থেকে কেটে পড়বে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নতুন ধারার রাজনীতি করা হবে উল্লেখ করে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, আমরা নতুন ধারার রাজনীতি শুরু করব। সময় হলে বিষয়টি জনগণের কাছে পরিষ্কার করা হবে। এখনই এ সম্পর্কে বললে ওনারাই (আওয়ামী লীগ) আমাদের ফর্মুলা অনুযায়ী রাজনীতি শুরু করবেন। সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পাঁয়তারা করছে মন্তব্য করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক হলে পুলিশ আওয়ামী লীগের কথা শুনবে না, ডিসি কথা শুনবে নাÑ সর্বোপরি প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না বলেই সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চায়। এ ছাড়া ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও গুণ্ডা লীগ ভোটকেন্দ্র দখল করতে পারবে না বলেই সরকার নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনকে আজ্ঞাবহ ও মেরুদণ্ডহীন উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, জিহুজুর মার্কা ইসি দিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। অসহায় ও মেরুদণ্ডহীন কমিশন দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। খালেদা জিয়া বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। নির্বাচন হচ্ছে একটা খেলা। খেলার মাঠ সমান না হলে খেলা সুষ্ঠু হয় না। সুতরাং নির্বাচনের জন্য সবার সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। জনগণই নির্ধারণ করবে খেলায় কে জিতবে।বিএনপির শিক্ষা সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক জিএস ও নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবীর খোকনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আব্দুল মঈন খান, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব:) অলি আহমদ বীরবিক্রম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য মাওলানা শামসুল ইসলাম, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মো: ইসহাক, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব আমানুল্লাহ আমান, জামায়াতের মজলিসে শূরা সদস্য ডা: রেদওয়ান উল্লাহ শাহেদী, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিনুল ইসলাম, নরসিংদী জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আ ফ ম আবদুস সাত্তার, সেক্রেটারি অধ্যাপক শেখ আব্দুল মালেক, যুবদলের সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা দলের সভাপতি নুরে আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, নরসিংদী জেলা বিএনপির সেক্রেটারি তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার, গোলাম কবির কামাল, জামাল আহমেদ চৌধুরী, , লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব:) জয়নাল আবেদিন, , স্বেচ্ছাসেবক দলের সেক্রেটারি মীর শরাফত আলী সপু, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, সেক্রেটারি হাবিবুর রশিদ হাবিব, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় শিক্ষা সম্পাদক মোবারক হোসাইন প্রমুখ।
হয় তত্ত্বাবধায়ক দিন নয়তো বিদায় নিন -খালেদা জিয়া
Share This