অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে :বরিশালের আগৈলঝাড়ার মেয়ে বৃষ্টি উজিরপুরে ৫বছর গৃহবধূ হিসেবে ঘর করার পরে মোটা অঙ্কের টাকা উপার্জনের মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে বিদেশে পাচার করার ঘৃণ্য চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে তার স্বামী, স্বামীর বন্ধু ও পরিবারের অন্যান্যরা। এঘটনায় সামাজিকভাবে বিভিন্ন উপায়ে মেয়েকে উদ্ধারের চেষ্টা করেও তিনি সফল হতে পারেনি নিখোঁজ গৃহবধূর পিতা।
সরেজমিনে ও মামলার নথিসূত্রে জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের রাহুৎপাড়া গ্রামের এ্যালবার্ট অচিন্ত্য বিশ্বাসের বড়মেয়ে সালোমী বিশ্বাস বৃষ্টি ২০০৯ সালের ১৯ জানুয়ারি উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের সিমন ফলিয়ার ছেলে তপন ফলিয়ার প্রেমে পরে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী তখন বৃষ্টির বয়স ছিল ১৫ বছর। দীর্ঘদিন ওই পরিবারে সংসার করার পরে স্বামী তপন বৃষ্টির বাচ্চা না হবার অজুহাতে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন চালাত এবং প্রায়শই যৌতুক দাবি করত।স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে বৃষ্টি পিত্রালয়ে এসে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বামী তপন ফলিয়া ও তার ভাবি আশালতাকে আসামী করে সিআর ৬৯/১৩ একটি মামলা দায়ের করে। এ মামলার হাত থেকে বাঁচার জন্য ধূর্ত তপন স্ত্রীকে প্ররোচিত করে মামলাটি প্রত্যাহার করায়। তপনকে এঘটনায় সার্বিক সহযোগিতা করে তার ঘনিষ্ট সহযোগী একই এলাকার শাজাহান বিশ্বাসের ছেলে আকতার বিশ্বাস। এরপরই তারা বৃষ্টিকে পাচারের নীল নক্শা বুনতে শুরু করে। তার ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি তপন ও আকতার মিলে বৃষ্টিকে চাকরীতে মোটা অঙ্কের টাকা উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে বৃষ্টির বাবা-মাকে না জানিয়ে ঢাকা নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে বৃষ্টিকে কোথায় কিভাবে রেখেছে তার কোন হদিস পাওয়া যায়নি বলে বৃষ্টির বাবা ও মা জানিয়েছেন। তারাসহ বৃষ্টির পিত্রালয় রাহুৎপাড়া খ্রিস্টান পল্লীর লোকজনদের ধারণা, ধূর্ত তপন তার সহযোগী ও বন্ধু কুচক্রী আকতার বৃষ্টিকে বিদেশে পাচার করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এ আশঙ্কায় ২৮ জানুয়ারি বৃষ্টির অসহায় পিতা এ্যালবার্ট অচিন্ত্য বিশ্বাস ও মা শ্যামলী বিশ্বাস, সিমসন রায়, ক্লেমেন্ট রায়, বার্নার্ড মার্জিন রায়, তরুণ রায়, আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরের পরিতোষ কীর্ত্তনীয়া, মো. সিদ্দিক সরদারসহ ১৪-১৫ জন লোক রাজাপুরে তপনের বাড়িতে বৃষ্টিকে উদ্ধারের আশা নিয়ে গেলে তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজাপুর গ্রামের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কতিপয় যুবক ও এক ইউপি সদস্য বৃষ্টির বাবার আশঙ্কা সত্যি হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন। এ অবস্থায় বৃষ্টির অসহায় পিতা তার মেয়েকে পাচারের হাত থেকে রক্ষা ও উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামণা করেছেন।