সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ বর্তমান সময়ে সাতক্ষীরায় ইলিশ মাছ পাচারে ব্য¯— সময় কাটাচ্ছে চোরাচালানিরা। প্রশাসনকে পালিশ দিয়েই ইলিশ পাচারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে জেলার শীর্ষ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার প্রভাবশালি প্যাটেল। পাশাপাশি ইলিশ পাচাররোধে ব্যর্থ হয়ে প্রশাসনও বলছে যা আসে তাই লাভ। ফলে ইলিশ চোরাচালান এখন জেলার মধ্যে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। আর এসুযোগেই এদেশের সম্পদ দেড়’শ টাকার ইলিশ মাছ এখন দেড় হাজার টাকায়ও মিলছে না। বাজারে যেয়ে ক্ষোভ আর হতাশায় ফিরছে জেলা শহরের মানুষ।
ভোমরা বন্দর থেকে সাতক্ষীরাশহর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে খোজ খবর নিয়ে জানাগেছে, বর্তমান সময়ে বেশি লাভের একমাত্র চোরাচালান ব্যবসা হচ্ছে ইলিশ পাচার। খাটাল বাণিজ্যের চেয়েও এখন লাভ জনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। মাত্র তিনটি সিন্ডিকেট ইলিশ মাছ চোরাচালানি ব্যবসা রমরমা গতিতে চালিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক নেতা এবং প্রশাসনের কয়েকটি ¯—র ম্যানেজ করেই এব্যবসা চলছে। প্রতিদিন রাত ১১ টা থেকে শুর“ করে ভোর পর্যন্ত বিরামহীন গতিতে প্রাইভেটকার মোটর সাইকেল ও ছোট পিকআপে এই মাছ পাচার হচ্ছে। জানাগেছে, ভাড়–খালির কানা সালাম ও তার সহযোগি মাহমুদপুরের নজর“ল ইসলাম নিয়ন্ত্রন করছেন একটি সিন্ডিকেট । অপর সিন্ডিকেটটে বাজে ভোমরার শ্যামল বাবু ও তার সহযোগি ভাড়–খালির টুটুল এবং সিন্ডিকেট র জাহাঙ্গীর হোসেন এই তিন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিদিন ভোমরা লস্কর গোডাউন পর্যš— পৌছে সেখান থেকে দাতভাঙ্গার বিল পেরিয়ে ভারতে যায়। এভাবেই লক্ষিদাড়ি, ভোমরা, গাজিপুর ও ঘোনা সীমান্ত দিয়ে দৈনিক ৪ থেকে ৫ শ মন ইলিশ মাছ ভারতে পাচার করা হচ্ছে।
সংশিষ্ট সূত্র জানায়, বরগুনা জেলার পাথরঘাটা ও বৃহত্তর বরিশালের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন সহশ্রাধিক মন ইলিশ মাছ দিনের বিভিন্ন সময়ে সাতক্ষীরায় আসছে। সাতক্ষীরা বড় বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী নুর আলী, সাবুদ আলী ও আলী হোসেনের আড়তে বিপুল পরিমান এই ইলিশ মাছ এসে জমা হয়। এরপর সেখান থেকে পাচারের সুবিধার্তে ছোট ছোট প্যাকেট ও চটের এক মনের বস্তায় প্রস্তুত করা হয়। রাত ১১ টার পর থেকে বড় বাজারের মধ্যে ইলিশ মাছ পাচারকারি ও বহনকারি ব্যবসায়ীদের বাজার বসে। ইটাগাছা হাটের সম্মুখ দিয়ে প্রতিদিন বিপুল পরিমান এই ইলিশ মাছ পাচার হলেও প্রশাসনের নজরে আসে না। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তিরা দৈনিক ও সাপ্তাহিক চুক্তিতে বখরা আদায় করে থাকে।
সীমান্ত সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল পরিমান এই ইলিশ মাছ ভারতের বশিরহাট বাজারে ৪ থেকে ৬ শত গ্রাম ইলিশ মাছ বিক্রয় হচ্ছে সাড়ে ৬ শ থেকে ৭ শত টাকায়। ৭ শ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যš— বিক্রয় হচ্ছে সাড়ে ৮ শ থেকে ৯ শ টাকায়। এছাড়াও এক কেজির উপরে ইলিশ মাছ বিক্রয় হচ্ছে এক হাজার থেকে ১২ শ ভারতীয় টাকা কেজি দরে। জানাগেছে ক্রয় মূল্যের কয়েক গুন বেশি দরে ভারতীয় টাকায় বিক্রয় হওয়ায় ইলিশ মাছ চোরাচালানিতে ঝুকে পড়েছে পাচারকারিরা।
সংশিষ্ট সূত্রানুযায়ী, ইলিশ মাছ পাচার চক্রের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন সাতক্ষীরা
সদর থানা, জেলা গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) পুলিশ, ডিএসবি, ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ি, পুরাতন সাতক্ষীরা ফাড়ি, এলাকা ভিত্তিক প্রত্যেকটি বিজিবি ক্যাম্প, ভোমরা বন্দরে থাকা এফএস সদস্য ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপ¶। জানাগেছে, ¯^ ¯^ বিভাগের দায়িত্বে থেকে প্রতিদিন ইলিশ মাছ পাচারকারিদের কাছ থেকে তোলা হচ্ছে ল¶ ল¶ টাকা। এছাড়াও সরেজমিনে দেখাগেছে, জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার প্যাটেল নামে পরিচিত জনৈক খোকন এসম¯— ইলিশ চোরাচালানিদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। তিনি বিভিন্ন সময় বড় বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সন্ধ্যায় যান ভোমরায়। রয়েছেন আরও এক যুবলীগ নেতা।
এদিকে পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্বশীল সূত্র গুলোর দাবী, ইলিশ মাছ চোরাচালানি র“খতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে কিন্তু পাচারকারিরা রাজনৈতিক শেল্টারে যাওয়ায় তেমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। ফলে বর্তমান সময়ে ইলিশ চোরাচালানিতে পুলিশের ভূমিকা নেই বললেই চলে।
বিজিবি ৩৮ ব্যাটালিয়নের নবাগত অধিনায়কের সাথে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের এক মত বিনিময়ে ইলিশ ও মাদক পাচারের বিষয়ে জোরালোভাবে অভিযোগ করা হয়। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও এখনও পর্যন্ত ইলিশ পাচারে তেমন কোন ভূমিকা দেখা যাইনি বিজিবি’র।
এব্যাপারে ভোমরা বন্দরের দায়িত্বে থাকা বিজিবি’র গোয়েন্দা সদস্য ইউনুছ আলীর সাথে গতকাল দুপুরে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইলিশ পাচারের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের রিপোর্ট করেছি। ইলিশ মাছ কয়েকবার আটকও হয়েছে। তবে নিমূল করা সম্ভব হচ্ছে না।
ডিএসবি’র দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, ভোমরা বন্দরের দীর্ঘদিন দায়িত্বে ছিলেন ডিএসবি সদস্য মিজান ও আলফাজ। তিনিও ইলিশ পাচারের সত্যতা স্বীকার করে হাসতে হাসতে বললেন, সবাই তো খাচ্ছে তা ডিএসবি খেলে সমস্যা কোথায়। ভোমরা বিওপি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা গুলজার হোসেন জানান, ইলিশ মাছ পাচার হচ্ছে শুনেছি। তবে সরাসরি ভোমরা এলাকা দিয়ে নয়। পাচারকারিরা অন্যকোন র“ট বেছে নিয়েছে। কিছুদিন আগে ইলিশের একটি চালান আটকের কথা জানিয়ে বলেন, সাতক্ষীরা শহরের ইলিশ বিকিকিনির স্থানে উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নিলে কোন সমস্যা থাকেনা। তবে বিজিবি ৩৮ ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক আনোয়ার“ল মাযহার বলেন, গত জুনমাসে কয়েকটি মামলা হয়েছে কিন্তু কোন ইলিশ চোরাচালানি আটক নেই।
এব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি আমান উল্যাহ জানান, গেল জুন মাসে আসামীসহ ইলিশ মাছ আটক করে ৩টি মামলা করেছি। এরপরও পাচার হচ্ছে স্বীকার করে বলেন, সকলের সহযোগিতা পেলে এটি বন্ধ হওয়া সম্ভব।
কাজী নাসির উদ্দীন/ সাতক্ষীরা /জি নিউজ