মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরি আশরাফুলের হলো না…

phpশ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ডাবল সেঞ্চুরি করার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম :  বেড়েই গিয়েছিল হার্টবিটটা ! লাঞ্চের আগেই মুশফিক ডাবল করে ফেলতে পারতেন। ১৯৮ থেকে আর তো দুই রান। পাঁচ পাঁচটি বল ডট খেলেন। মুশফিক নিজেকে সামাল দিতে পারলেও টিভি স্কিনে দেখা ক্রিকেটামোদীদের আর যেন তর সইছিল না। লাঞ্চের পর প্রথম ওভার থেকে এক রান নেয়ার পর ১৯৯। টেনশন আরো বেড়ে যায়। কুলাসেকেরার করা পরের ওভারের প্রথম বলটি কাভারের দিকে ঠেলে এক রান নিয়ে রচনা করে ফেলেন এক নতুন ইতিহাস বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে। ২০০। ডাবল সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের ১৩ বছরের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তিনিই তো প্রথম। যিনি প্রদর্শনে সক্ষম হলেন ওই কৃতিত্বের। টিভি স্ক্রিনেও যারা খেলা দেখেন তারাও যেন আনমনে বলে উঠলেন, ‘অভিবাদন তোমাকে মুশফিক’। টেনশনের কারণ তো অবশ্যই রয়েছে। ডাবল সেঞ্চুরির প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং জিনিয়াস মোহাম্মাদ আশরাফুলের ব্যাট থেকে। আগের দিন যিনি ১৮৯ রানে ছিলেন অপরাজিত। বাংলাদেশকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যাবেন তিনি তার কাছে কী আর ১১ রান খুব বেশি কিছু? কিন্তু ওই রান কটা যেন ১৮৯ রানের চেয়েও কঠিন হয়ে গিয়েছিল তার কাছে। একটু চেষ্টা করলে আগের দিনও করে ফেলতে পারতেন ডাবল! কিন্তু করেননি। এতে করে প্রেসারটা যেন আরো বেড়ে গিয়েছিল তার। যে বলে অহেতুক শট খেলতে গিয়ে আউট হলেন তার আগে আরো ১০টি বল থেকে কোনো রান নেননি। ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছিলেন ঠিকই। কারণ সকালের ময়েশ্চারটাও তো তাকে দেখতে হবে। কিন্তু নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না। অব স্ট্যাম্পের বাইরের বলটিই তার খেলতে হবে। এবং সেটা করতে গিয়ে টার্ন করা বলটি ব্যাট ছুঁয়ে ফাস্ট স্লিপে। যে ট্রাফে ফেলার দীর্ঘ প্রচেষ্টা ছিল হেরাতের। সেটাতেই তিনি অবশেষে সফল। আশরাফুল আউট ১৯০ রানে। কাক্সিত ডাবল আর হলো না তার। তবুও দলকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পেছনে আশরাফুলের বিশাল অবদান। দল থেকে যে বাদের তালিকায় ছিলেন তিনি তাতে ‘ফেরা’র কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। তবুও হাল ছেড়ে দেননি। নিজের সাধ্য মতোই খেলে চলছিলেন দেশের এ অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। শেষ পর্যন্ত ক্রাইসিসম্যান হিসেবে চান্স পেয়ে যে ব্যাটিং নৈপুণ্য প্রদর্শন করলেন আশরাফুল। সেটা এক কথায় অসধারণ। একমাত্র আশরাফুলের পক্ষেই সম্ভব। ডাবল না পেলেও তারই দেখানো পথে হেঁটে মুশফিকুর পৌঁছেছেন মার্কে। দিন শেষে দেশের সান্ত্বনা এখানেই।

টেস্ট ইতিহাসের দলীয় সর্বোচ্চ স্কোরটা দেশের মাটিতেই হয়েছিল গত নভেম্বরে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঢাকায় ৫৫৬ রান করেছিলেন তারা। কাল সেটা টপকে দলীয় স্কোর পৌঁছাল ৬৩৮-এ। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে এর আগে এক ইনিংসে তিন সেঞ্চুরি নেই। এবারই প্রথম। কারণ ওই ব্যাটসম্যানের পর নাসিরও করেছেন ১০০ রান। এর আগে ২০০৪-এ ওয়েস্ট ইন্ডিজে হাবিবুল বাশার ও মোহাম্মাদ রফিক সেঞ্চুরি করেছিলেন এক ইনিংসে।

এ দিকে মুশফিক এ ডাবল করে টেস্ট ইতিহাসের অনন্য স্থানে নিয়ে গেছেন নিজেকে। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে নম্বর ৬-এ নেমে ডাবল সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিক নবম। বাংলাদেশের পক্ষে ছয় নম্বরে নেমে সর্বোচ্চ স্কোর ছিল সাকিবের ১৪৪। বাংলাদেশ অধিনায়ক তো দলের উইকেট কিপারও। মুশফিক সপ্তম উইকেট কিপার কাম ব্যাটসম্যান যিনি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন টেস্ট ক্রিকেটে। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কোনো উইকেট কিপার হিসেবে ডাবল করার রেকর্ডটা এখন মুশফিকেরই দখলে। এর আগে কামরান আকমলের অপরাজিত ১৫৮ই ছিল সর্বোচ্চ।  এ ছাড়াও গলের এ ম্যাচটা আরো একটা কারণে ইতোমধ্যে স্মরণীয় হয়ে উঠেছে। কারণ এক ম্যাচে ছয় বা ততধিক সেঞ্চুরি টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ৩১তম। আর শ্রীলঙ্কায় গত ১৬ বছরে প্রথম। শ্রীলঙ্কার সাঙ্গাকারা, থিরুমানে ও চান্দিমালের পর বাংলাদেশের আশরাফুল, মুশফিক ও নাসিরও তার সমান জবাব দিলেন। সাবাস বাংলাদেশ।  তবে ম্যাচের তৃতীয় ও চতুর্থ দিনের ওই সাফল্য আরো আনন্দময় হয়ে উঠবে যদি আজ শেষ দিনটা ভালোমতো শেষ করতে পারে। কারণ দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কার লিড এখন ৪৮। আজ হয়তো ওয়ানডে স্টাইলে খেলে ডিকেয়ার করে একটা চান্স নেবেন। সেখানে যদি ভালো একটা ব্যাটিং করে ম্যাচটা ড্র করতে পারেন।

Exit mobile version