বাংলাদেশের ওপর অবরোধ চাপাতে পারে পশ্চিমা শক্তি

আনন্দবাজার পত্রিকা

অনলাইন ডেস্ক  ঃ- ভারত মনে করছে বাংলাদেশে নতুন সরকারের ওপর আর্থিক অবরোধ চাপাতে পারে পশ্চিমা শক্তি।‘উদ্বিগ্ন ভারত, হিংসা রুখতে কড়া হাসিনা’ শিরোনামে কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকা গতকাল এ খবর জানায়। আনন্দবাজার পত্রিকার খবরটি হুবহু তুলে ধরা হলো, নির্বাচন-পরবর্তী হিংসা রুখতে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশে যশোর, সাতক্ষীরা, জামালপুর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, খুলনা, চট্টগ্রাম ও পঞ্চগড়ের দুর্গত এলাকাগুলোতে পুলিশ ও আধাসেনারা অভিযান শুরু করেছে। হামলায় ঘরহারাদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি দুষ্কৃতকারীদের নামের তালিকা তৈরি করে ধরার কাজও শুরু হয়েছে। ঢাকার সরকারি সূত্রের খবর, এ ধরনের হিংসায় জড়িতদের বিচারের জন্য বিশেষ ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গড়া হচ্ছে। কাল বিকেলে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বাড়ি গিয়ে তার সাথে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে সরকার গঠনের পাশাপাশি এই বিষয়টিও আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পায়। নির্বাচনের পর দেশের সীমান্ত এলাকায় জামায়াতে ইসলামীর পরপর হামলায় নয়াদিল্লিও বিশেষ উদ্বিগ্ন। এসব ঘটনায় সীমান্তে চাপ ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি হাসিনাকে টেলিফোনে এই উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন। ব্রিটেন-আমেরিকা ও তাদের প্রভাবিত কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংগঠন বাংলাদেশে বিরোধী দলশূন্য নির্বাচনের সমালোচনা করে সব পক্ষকে নিয়ে ফের নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। ভারত মনে করছে, এ জন্য বাংলাদেশে নতুন সরকারের ওপর আর্থিক অবরোধও চাপাতে পারে পশ্চিমা শক্তি। ঘরে-বাইরে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে হাসিনা সরকার যাতে দৃঢ়ভাবে হাল ধরতে পারে, সে জন্য হাসিনাকে বেশ কিছু জরুরি পরামর্শও দিয়েছেন মেনন।
কাল জোটের বৈঠকে ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল) মতো শরিকরা বাংলাদেশের নানা জায়গায় জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির কর্মীদের তাণ্ডবের ভয়াবহ ঘটনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, ফজলে হোসেন বাদশার মতো শরিক নেতারা জানান, ভোটের আগে থেকেই এসব এলাকার গরিব মানুষকে ভোট না দেয়ার জন্য হুমকি দেয়া চলছিল। কিন্তু তার পরও তারা ভোট দিয়েছেন। তারপরই সন্ত্রাস শুরু হয়েছে। রাতে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ও দোকান লুট করে আগুন ধরানো হয়েছে। ধানের গোলা, গোয়ালঘর, এমনকি পানের বরজও জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। রাতারাতি সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন শ’ শ’ পরিবার। রেহাই পায়নি ধর্মস্থানও। শরিক নেতাদের অভিযোগ, অনেক জায়গাতেই পুলিশের সহায়তা চেয়েও পাননি আক্রান্তরা। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, সব ঘটনাই তিনি জানেন। হামলাকারীদের ধরতে পুলিশকে কড়া ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। দুর্গত এলাকাগুলোতে বাড়তি পুলিশও পাঠানো হয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি ওই সব এলাকায় আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আওয়ামী লিগের কর্মীদেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, দেশের সব মানুষের ‘জানমালের দায়িত্ব’ তার। এ ধরনের হামলায় জড়িত দুষ্কৃতকারীদের শুধু ধরাই নয়, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্যও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেনন হাসিনাকে বলেন, সীমান্তের নিরাপত্তা সুরক্ষিত করার প্রশ্নে ভারতের সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোই তার ওপর চাপ দিচ্ছে। কিছু দিন আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী জরুরি বৈঠক করেছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনের সাথে। সেখানেই সীমান্ত সিল করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সূত্রের খবর, গত দু’দিনে যশোর ও সাতক্ষীরায় হিংসার ফলে বেশ কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়েছেন সীমান্তের পাশে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক মনে করছে, এখনো বড় হারে অনুপ্রবেশ শুরু হয়নি ঠিকই, কিন্তু হাসিনা সরকার যদি কঠোর হাতে পরিস্থিতির মোকাবেলা না করতে পারে, তা হলে ভারতের ওপর চাপ অনেকটাই বাড়বে। এর মোকাবেলায় ভারতের প থেকে বেশ কিছু পরামর্শ মেনন দিয়েছেন হাসিনাকে। নির্বাচন-পরবর্তী হিংসাই এখন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান মাথাব্যথা। এ হামলা নিয়ে জামায়াতে ইসলামী কোনো সাফাই না গাইলেও তাদের আড়াল করতে মাঠে নেমেছে বড় শরিক বিএনপি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল দাবি করেন, ‘সাজানো নির্বাচন থেকে নজর সরাতে শাসক দলই এই হামলা চালাচ্ছে। তাদের আসল লক্ষ্য এসব হামলার মামলায় জড়িয়ে বিরোধী কর্মীদের ফাটকে পোরা।’ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়েই দুর্গত এলাকায় গিয়েছেন নির্বাচিত সংস সদস্যরা। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, প্রথম দিকে পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা কোথাও কোথাও গাফিলতি দেখালে শাস্তির মুখে পড়ার ভয়ে তারা সক্রিয় হয়েছেন। আওয়ামী লিগ ছাড়া অন্য শরিক দলের কর্মীরাও আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তারা যাতে আতঙ্কে দেশ ছেড়ে না যান, সে জন্য তাদের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হচ্ছে। রাজশাহীর সংসদ সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, প্রশাসনের সাথে রাজনৈতিক কর্মীরাও যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন, তাতে আক্রান্তরা ভরসা পাচ্ছেন। এ জন্যই দেশ ছাড়ার হিড়িক বিশেষ পড়েনি। মালদহ (দক্ষিণ)-এর সংসদ সদস্য তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরীও (ডালু) গতকাল বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রকে। সেই চিঠিতে তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশে যে সন্ত্রাস সৃষ্টি হয়েছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে আতঙ্ক বাড়ছে। তার বক্তব্য, কেন্দ্র অবিলম্বে বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরো সঙ্কটজনক হবে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনকে এ ব্যাপারে সজাগ করে দেয়ার অনুরোধও কেন্দ্রকে করেছেন ডালু বাবু। ফোনে তার সাথে শিবশঙ্কর মেননেরও কথা হয়েছে। ডালু বাবুর কথায়, ‘মেনন আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশের সাথে তারা সঠিক লাইনেই কথা বলছেন। সূত্র : ইন্টারনেট তাঃ- ১০ জানুয়ারি ২০১৪

 

Exit mobile version