বকচরায় খালেক হত্যাকাণ্ডের রহস্য ঘনিভূত: নিহতের ঘর থেকে রক্তমাখা ওড়না উদ্ধার!

কাজী নাসির উদ্দীন, সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃসাতক্ষীরা  শহর উপকণ্ঠের বকচরা গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক (৪০) কে জবাই করে হত্যার ঘটনায় ৪দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ তেমন কোন অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। ঘটনার দিন সকালে নিহতের স্ত্রী রহিমা খাতুন বুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসলেও তেমন কোন তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। ধৃতকে ইতোমধ্যে কার্যবিধির ৫৪ ধারায় কারাগারে প্রেরণ করেছে। কিন্তু নিহতের পরিবারের অভিযোগ স্ত্রী রহিমার পরকিয়ার কারণেই আব্দুল খালেক কে গলাকেটে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানাগেছে, গত ৩১ আগস্ট রাত ৮ টার দিকে আব্দুল খালেক বাড়ি থেকে ভাত খেয়ে বাড়ির পাশের বকচরা পশ্চিম মাঠের মেশিন ঘরে ঘুমাতে যায়। প্রাই সে উক্ত মেশিন ঘরে ঘুমাতো। প্রতিদিনের মত ঘুমাতে যাওয়ার পরদিন সকালে বাড়িতে না ফেরায় নিহতের কন্যা খাদিজা খাতুন (৮) ডাকতে যেয়ে তার লাশ দেখতে পায়। এসময় তার চিৎকারে এলাকার লোকজন ছুটে এসে খালেক কে জবাই করা অবস্থায় দেখে সাত¶ীরা সদর থানার পুলিশকে অবহিত করে। সদর থানার ওসি (তদন্ত) নাসির উদ্দীনসহ সঙ্গীয় ফোর্স উক্ত স্থানে পৌছে লাশ উদ্ধার করে। ওইদিনই ময়না তদন্ত  শেষে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয় নিহত আব্দুল খালেক কে।

ঘটনারদিন বিকালে নিহতের ফুফাতো ভাই সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ২ তাং-১.০৯.১৩। এদিকে ঘটনার দিন সকালে পুলিশ লাশ উদ্ধার পূর্বক এলাকাবাসীর বিভিন্ন মতামতের ভিত্তিতে নিহতের স্ত্রী রহিমা খাতুন বুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। দুই দিন থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সোমবার কার্যবিধির ৫৪ ধারায় কারাগারে প্রেরণ করেন। এদিকে সোমবার দুপুরে নিহতের বসত ঘর থেকে পুলিশ আটক স্ত্রীর ব্যবহৃত একটি ওড়না উদ্ধার করেছে। যে উড়নায় রক্তের ছোপ ছোপ দাগ রয়েছে। ভিজা অবস্থায় ওড়নাটি ঘরের আলনায় কাপড়ের তলায় রাখা ছিল বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।

এদিকে আব্দুল খালেক হত্যাকাণ্ডের রহস্য নিয়ে সংশি­ষ্ট এলাকায় নানা মত পার্থক্য রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রতিবেশি জনৈক যুবক ছেলের সাথে নিহত খালেকের স্ত্রী রহিমা খাতুন বুড়ির সাথে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। এরই জেরধরে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে তেমন ভাল সম্পর্ক ছিলনা। ফলে আব্দুল খালেই প্রাই সময় বাড়ি ছেড়ে মেশিন ঘরে রাত কাটাতো। এলাকাবাসী আরও জানায়, প্রায় এক বছর আগে আব্দুল খালেক রাতে ঘুমাতে যেয়ে স্ত্রী রহিমার বালিসের নীচে একটি দা দেখতে পায়। ওই রাতেই স্থানীয়দের ডেকে বিষয়টি ঘরোয়া ভাবে মিমাংশার করে বলে জানাযায়। প্রতিবেশি জনৈক যুবকের সাথে রহিমার প্রেমের সম্পর্ক থেকে অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি স্থানীয়রাও অকেবহাল। আর এসব নিয়েই স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে দুরত্ব চলে আসছিল। পাশাপাশি স্ত্রীর ঘর থেকে রক্তমাখা ওড়না উদ্ধারের পর আব্দুল খালেক হত্যাকাণ্ডের  স্ত্রীর জড়িত থাকার বিষয়টি সন্দেহের তীর পরিস্কার হয়েছে এমনটি মন্তব্য এলাকাবাসীর।

তবে আলোচিত বকচরার আব্দুল খালেক হত্যাকাণ্ড মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা এসআই হযরত আলী জানান, এলাকাবাসীর সন্দেহের তীর স্ত্রীর দিকে থাকলেও তাকে গভীর ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে সে তেমন কিছু স্বীকার করেনি। পুলিশের সন্দেহও তার স্ত্রীর উপর দাবী করে তিনি বলেন, সোমবার নিহতের ঘর থেকে একটি ওড়না উদ্ধার করা হয়েছে। যে উড়নায় রক্তের ছোপ ছোড় দাগ রয়েছে। এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে পুলিশ জানায় ওড়নাটি স্ত্রী রহিমা খাতুন বুড়ির। ফলে ওড়নাটি ফরেনসিকের মাধ্যমে অথবা ডিএনএ টেষ্ট করলে বিষয়টি পরিস্কার হবে। পুলিশ জানায়, রহস্য অনেকটা ঘনিভূত। এখনও তেমন পরিস্কার হওয়া যাইনি। তবে স্ত্রীর উপর সন্দেহ থাকায় তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রস্তুতি চলছে।

Exit mobile version