অনলাইন ডেস্ক ঃ- বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারি সাধারণ নির্বাচনের পর নিরাপত্তা এবং কূটনীতি দুদিক থেকেই পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। এজন্য বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নতুন সরকার গঠন করলেও শেখ হাসিনাকে দ্রুত দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে দ্রুত পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতির পরামর্শ দিয়েছে ভারত। সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার জন্য ৫ জানুয়ারির আগেই ভারত কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে ঢাকায় পাঠাতে পারে।
বৃহস্পতিবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পত্রিকা আনন্দবাজারে নয়া দিল্লির কাছে বাংলাদেশ নিয়ে সুনির্দিষ্ট রিপোর্ট গেছে উল্লেখ করে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।
আনন্দবাজার লিখেছে, নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত বিএনপি অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় গোটা লড়াইটাই একপেশে হয়ে গিয়েছে। ১৫৩টি আসনে ইতিমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে বসে রয়েছেন এক জন করে প্রার্থী। এর মধ্যে ১৩২ জনই শাসক আওয়ামী লীগের। বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া ‘কার্যত গৃহবন্দী’ বলে দাবি করেছে তার দল। বিএনপির অনেক নেতাই জেলে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছে পশ্চিমি দুনিয়া। তাই এই দফায় সরকার গড়লেও খুব দ্রুত দেশে রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে আরো একটি সাধারণ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ ঢাকাকে দিচ্ছে নয়া দিল্লি।
আনন্দবাজার লিখেছে, যে রিপোর্টটি সম্প্রতি সাউথ ব্লকে পৌঁছেছে তাতে বলা হচ্ছে, এই নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হবে তার সঙ্গে চূড়ান্ত অসহযোগিতার পথে হাঁটবে আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপরে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। কোনো কারণে এই সরকার পড়ে গিয়ে জামায়াত সমর্থিত বিএনপি সরকার আসে, তা হলে বিপুলসংখ্যক অনুপ্রবেশকারী মোকাবিলার জন্য ভারতকে প্রস্তুত থাকতে হবে। তখন শুধুমাত্র হিন্দুরাই নন, অসংখ্য ধর্মনিরপেক্ষ মুসলমানও বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হবেন। আর তাদের সহজ গন্তব্য হবে ভারত।
কূটনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগকে বোঝানো হচ্ছে উল্লেখ করে আনন্দবাজার লিখেছে, সব মিলিয়ে তাই একদিকে যেমন সীমান্ত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কোমর বাধা হচ্ছে, শরণার্থীদের প্রশ্নে কিছুটা মানবিকতার পথেই হাঁটার কথা ভাবা হচ্ছে, অন্য দিকে কূটনৈতিক স্তরে হাসিনা সরকারকেও বোঝানো হচ্ছে, পরিস্থিতির রাশ ধরার জন্য সংবেদনশীল পদক্ষেপ করতে হবে। কেননা বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘতম সীমান্তের ভাগীদার ভারতের পক্ষেও অবস্থাটা আদৌ অনুকূল নয়। বিষয়টির নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিকদু’রকম দিকই রয়েছে বলে মনে করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
প্রতিবেদনে জামায়াতে ইসলামকে দমনের জন্য জরুরি অবস্থা জারিকে একটি উপায় উল্লেখ করে বলা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর জঙ্গিপনা পুরোপুরি শেষ করে দেয়ার জন্য প্রয়োজনে জরুরি অবস্থা জারি করা একটি উপযোগী পন্থা হিসেবে মনে করছে শেখ হাসিনা সরকার। তাদের দাবি, সে ক্ষেত্রে এক দিকে নির্বিঘ্েন যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আবেগকে জাগিয়ে তোলা সম্ভব হবে। অন্যদিকে বিরোধীদের লাগাতার হরতাল-অবরোধ বন্ধ হওয়ায় জনজীবন স্বাভাবিক হবে। মানুষও স্বস্তি পাবেন। পশ্চিম বিশ্বের পক্ষেও বাংলাদেশ-বিরোধী অবস্থান নেয়া সহজ হবে না। কিন্তু ঢাকা এ কথা মনে করলেও এই পরিস্থিতি যে দীর্ঘদিন চলতে পারে না, সে কথাই বলা হচ্ছে রিপোর্টে।
আনন্দবাজার জানায়, চলতি পরিস্থিতির মোকাবিলায় হাসিনা সরকারকে জরুরি অবস্থা জারি করতে হতে পারে, এমন কথাই বলছে ওই রিপোর্ট। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে সে দেশের সংবিধান অনুসারে চার মাস পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে সরকার।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ হিংসামুক্ত আবহাওয়ায় একটু নিঃশ্বাস নেয়ার অবকাশ পাবেন। ব্যবসায়ী সমপ্রদায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন, জিনিসের অগ্নিমূল্যও কমবে। যুদ্ধাপরাধীদের একের পর এক ফাঁসি হলে হয়তো আবার উন্মত্ত হতে পারে জামায়াত। কিন্তু সে ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থাকে আরো কিছু দিন বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ পাবে সরকার। পশ্চিমের পক্ষেও বিরোধিতা করা কঠিন হবে।
কিন্তু এই পরিস্থিতি দীর্ঘদিন চলুক, ভারত তা চাইছে না। আর সে কথাটাই বোঝানোর কথা ভাবা হচ্ছে শেখ হাসিনার সরকারকে।
আনন্দবাজার প্রতিবেদনে লিখেছে, সীমান্ত সিল করে দেয়া অথবা শরণার্থীদের জন্য ব্যবস্থা করা আপৎকালীন তৎপরতা হতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদিভাবে এই চাপের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়াটা নয়া দিল্লির কাছে যেমন সহজ নয়, তেমনই কাম্যও নয়। পূর্ব উপকূলকে কাজে লাগিয়ে ভারতে জঙ্গি পাচার করার জন্য মুখিয়ে রয়েছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। সুতরাং বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদি ভাবে জঙ্গিপনার দিকে হাঁটুক, এটা কিছুতেই চায় না সাউথ ব্লক। আর তাই আমেরিকার সঙ্গে সামপ্রতিক আলোচনায় পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিংহ জানিয়েছেন, জামায়াতে ইসলামীকে কোনোভাবে প্রশ্রয় দেয়া হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থেই জামায়াতকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ নিয়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানগত পার্থক্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিষয়টি নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে দীর্ঘ দৌত্যের পরেও যে আমেরিকা সুর নরম করেনি, তা এখন স্পষ্ট। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা খোলাখুলিই জানিয়েছেন, নির্বাচন হওয়া উচিত অবাধ এবং নিরপেক্ষ। আসন্ন ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগের ভূমিকায় যে আমেরিকা আদৌ সন্তুষ্ট নয়, সে কথাও বারবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। পশ্চিমি দুনিয়া বলছে, বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছেন শেখ হাসিনা।খবর অনলাইন ।