ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে ইউরোপের তরুণ প্রজন্ম

dw 28অনলাইন ডেস্ক :- বেকারত্বের হার বৃদ্ধি, বাধ্যতামূলক ব্যয় সংকোচন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধীর গতি ইত্যাদি কারণে ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত হয় পড়ছে ইউরোপের মানুষ৷ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ধৈর্য ও সাহস হারিয়ে ফেলছে৷ অর্থনৈতিক সংকট থেকে ধীরে ধীরে গা ঝাড়া দিয়ে উঠছে ইউরোপ৷ আগামী বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এক শতাংশ বাড়বে বলে মনে করছেন  বিশেষজ্ঞরা৷ তবে এই ঊর্ধ্বগতিটা বেশ শ্লথ৷ ইউরোপের তরুণরা চাকরির ব্যাপারে আশার আলো দেখছেন খুব কমই৷ ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে ২৫ বছরের কম বয়সি তরুণদের মধ্যে সাড়ে তিন মিলিয়নের বেশি ছিলেন বেকার৷ স্পেন ও গ্রিসে তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৫০ শতাংশেরও বেশি৷ অবশ্য ইউরোপের দক্ষিণের দেশগুলিতে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার আগে থেকেই এই প্রবণতাটা লক্ষ্য করা গেছে৷ বার্লিনের জার্মান অর্থনৈতিক গবেষণা ইন্সটিটিউটের কার্ল ব্রেঙ্কে এর পেছনে কাঠামোগত দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেন৷ অবশ্য গত কয়েক বছরে তা তীব্র হয়েছে৷ দক্ষিণ ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে তরুণদের পেশাগত প্রশিক্ষণ তেমন মানসম্মত নয়৷ এছাড়া সংস্কার সত্ত্বেও সেখানকার কর্মবাজার এখনও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত৷ তবে যুব-বেকার সমস্যা এখন ক্রমেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে৷

কেমন আছে নিজের সন্তান

অনেক মা-বাবা প্রায়ই জানেন না যে তাদের আদরের সন্তান কেমন আছে৷ ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের মৃত্যুর প্রধান কারণ দুর্ঘটনা আর দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে আত্মহত্যা৷ জার্মানিতে প্রায় প্রতিদিনই দু’একজন আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে৷ তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হলে বয়স্করাও উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত গ্রীষ্মে যুব-বেকারত্ব নিয়ে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে৷ কারণ একটি ‘হারিয়ে যাওয়া প্রজন্ম’ রাজনীতিকদের জন্য ইতিবাচক হতে পারে না৷ ‘‘অল্পবয়সিরা শুরুতেই যদি কোনো কাজ পেতে অসুবিধার সম্মুখীন হন, তাহলে সমাজের কাছ থেকে তাদের দূরত্ব বাড়বে,” সতর্ক করে বলেন ব্রেঙ্কে৷ প্রথমে দেখা দেয় হতাশা আর তা থেকে সৃষ্টি হয় নৈরাশ্য৷ এর ফলে অনেকে হাল ছেড়ে দিতে পারেন বলে জানান বার্লিন গবেষণা কেন্দ্রের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ক্রিশ্টিয়ান ব্রিজিনস্কি-ফে৷

 

জার্মানিতে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সমস্যা

শেষ চিঠি

লেনার মা সুজানে বলেন, তাঁর মেয়ে ১৬ বছর বয়সে ব্লেড এবং ছুরি দিয়ে কয়েকবারই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলো৷ প্রথমদিকে বাবা-মা বা স্কুলের শিক্ষক কেউ সেটা খেয়ালই করেনি৷ চিঠির বাক্সে লেনার লেখা বিদায়ী চিঠি পেয়ে বুঝেছেন, যে তাঁর মেয়ে মানসিক সমস্যায় ভুগছে, জরুরি সাহায্য বা চিকিৎসার প্রয়োজন৷

জার্মানিতে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সমস্যা

অনুভূতির প্রকাশ

হাইডেলব্যার্গ ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের প্রফেসার ড. রমুয়াল্ড ব্রুনার বলেন, যদি কেউ নিজের হাত বা পায়ের রগ কেটে ফেলে বা এ ধরনের কিছু একটা করে বসে, তাহলে বুঝতে হবে এটা ওদের রাগ, দুঃখ বা হতাশার প্রকাশ মাত্র৷

জার্মানিতে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সমস্যা

নিজেকে কষ্ট দেওয়া

১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সি কিশোর-কিশোরীদের ওপর একটি সমীক্ষা চালানো হয় এবং সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের পরিচয় গোপন রাখা হয়৷ সমীক্ষার ফলাফলে ছেলেদের মধ্যে ৮ জন এবং মেয়েদের মধ্যে ১৮ জন স্বীকার করেছে, তাদের এই ছোট্ট জীবনে অন্তত তিনবার হাত পা কেটেছে, নিজেদের কষ্ট দিয়েছে, তাদের জীবনের দুঃখ, কষ্ট বা হতাশা ভুলে যাবার জন্য৷

জার্মানিতে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সমস্যা

ইন্টারনেট, ফেসবুক, মোবাইল

আজকের আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির যুগে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অনেকেই যোগাযোগের জন্য বেছে নেয় কৃত্রিম মাধ্যম ইন্টারনেট, ফেসবুক৷ তাদের মধ্যে অনেকেই ইন্টারনেট নেশাগ্রস্ত৷ এদের অনেকের মতে, মোবাইল ছাড়া জীবন চলাই সম্ভব নয়৷

জার্মানিতে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সমস্যা

আসল বন্ধু পাওয়া যায়না

একথা ঠিক, যে আজকের দিনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ অনেক সহজ হয়েছে এবং ব্যবহারও হচ্ছে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব যোগাযোগ আসল বন্ধু পেতে কোনো কাজে আসেনা৷ বরং এসব বিষণ্ণতার দিকেই ঠেলে নিয়ে যায় এবং ভয় ও আত্মহত্যার চিন্তা করতে সহায়তা করে৷

জার্মানিতে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সমস্যা

বসঃসন্ধিকাল

ছেলে মেয়েদের বসঃসন্ধির সময় ওদের আত্মসম্মানবোধ, অকারণেই মন খারাপ হওয়া বা ঘুমের সমস্যা দেখা দেওয়া প্রাকৃতিক নিয়মেই ঘটে থাকে৷ তবে এ সব সমস্যা যদি ঘনঘন দেখা দেয় বা বাড়াবাড়ি হয়, তাহলে সেটা মানসিক অসুস্থতা বলেই ধরতে হবে এবং চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে, বলেন ড.ব্রুনার৷

জার্মানিতে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সমস্যা

শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে

কিশোর-কিশোরীদের এই ধরনের সমস্যায় স্কুলের শিক্ষকদের আরো বেশি এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷

জার্মানিতে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সমস্যা

আলোচনা করতে হবে

মানসিক সমস্যায় শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবক, ছোট-বড় অনেকেই ভোগে এবং আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয়৷ এ ধরনের সমস্যাগুলোর শুরুতেই গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন মনোবিজ্ঞানীরা৷

জার্মানিতে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সমস্যা

শরীর চর্চা

রাগ, দুঃখ বা হতাশা থেকে সহজে বের হওয়ার উপায় শারীরিকভাবে বা অন্য কোনোভাবে ব্যস্ত থাকা৷ কোনো কাজে যুক্ত হওয়া৷ হতে পারে খেলাধুলা বা যে কোনো ধরনের শরীরচর্চা৷ হতে পারে বাগানের কাজে কাউকে সাহায্য করা, যে কাজ সত্যিকার অর্থেই মনকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে৷
প্রতিবেদন: নুরুননাহার সাত্তার | সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

 

প্রতিবাদী হয়ে উঠছেন তরুণরা

তবে যুব সমাজের হাল ছেড়ে দেওয়ার লক্ষণ সেসব দেশে দেখা যাচ্ছে না৷ বরং অনেক জায়গায় তাদের যুদ্ধংদেহী ভাব লক্ষ্য করা যায়৷ স্পেন, গ্রিস, পর্তুগাল, ইটালি ইত্যাদি দেশগুলিতে ধর্মঘট, প্রতিবাদ, বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে মানুষ৷ তরুণরা তাদের ভবিষ্যৎ, পরিবার পরিজন, সমৃদ্ধি এসব ব্যাপারে উদ্বিগ্ন৷ আগের প্রজন্মের ওপরও ক্ষুব্ধ তারা৷ তাদের ধারণা, আগের প্রজন্ম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে ভুলভ্রান্তি করেছেন, তার মাশুল দিতে হচ্ছে তাদের৷ সুযোগটা কাজে লাগায় কট্টর দক্ষিণপন্থিরা- এই সুযোগটা কাজে লাগাতে চাইছে কট্টর দক্ষিণপন্থি রাজনৈতিক দলগুলি৷ এক্ষেত্রে এক ‘বলির পাঁঠা’ও পেয়ে গেছে তারা৷ আর সেটি হলো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য এই সংস্থাটিই দায়ী বলে তারা জোরেশোরে প্রচারণা চালাচ্ছে৷ইউরোপীয় ইউনিয়নে এই রকম আবহ বিরাজ করতে থাকলে চরম দক্ষিণপন্থি দলগুলি ইউরোপের পার্লামেন্ট নির্বাচনে শক্ত অবস্থানে আসতে পারে৷ ‘‘এই ধরনের পার্টিগুলি যে সস্তা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, তা লক্ষ্য করা যায় ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস কিংবা স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলিতে,” বলেন ব্রিজিনস্কি-ফে৷ তবে ইউরোপীয় সমাজ দৃশ্যমান চরমপন্থার দিকে ঝুঁকবে বলে মনে করেন না এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী৷ কেননা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি এখানে অনেক মজবুত৷  খবর DW DE এর

 

 

 

Exit mobile version