জাহিদুল ইসলাম মিলন, শেরপুর জেলা প্রতিনিধি : শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া গ্রামের শ্রীকান্ত কোচের ছেলে হেমন্ত কোচ (১৫) ও প্রেমানন্দ কোচের শিশু পুত্র শীতল ওরফে হেদা কোচ (১২) কে গত ১৩ আগষ্ট মঙ্গলবার ভোর রাতে ভারতের ছিছিংপাড়ার নাগরিকরা ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে মেরে ফেলে ভারতীয় নাগরিকরা। নৃশংসভাবে হত্যা করে নাকুগাঁও স্থলবন্দর দিয়ে লাশ হস্তান্তর করেছে নিহতের পরিবারের নিকট। লাশ দাফনের পর থেকে নিহতদের পরিবারের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এ ব্যাপারে সরেজমিনে পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখা যায়, শোকাহত পরিবারের মাঝে কান্নাকাটি। আদরের ছেলেদের হারানোর যন্ত্রণা বুকে নিয়ে উভয়ের মা কাতরাচ্ছে। হেমন্ত কোচের পিতা জানান, আমার ছেলে ট্রাক্টর চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। ঘটনার দিন তারা কিভাবে সীমান্তে পাড়ি জমিয়েছে তা আমার বিশ্বাস হয় না। আমার অবিবাহিত ছেলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আইন শৃক্সখলা ও রাষ্ট্র বিরোধী কোন কার্যকলাপের সাথে জড়িত ছিল না । যা সাক্ষ্য প্রমাণ করবে আমার এলাকাবাসী। নিহতের মাতা জানান, আমার দুই ছেলে, এক মেয়ের মধ্য থেকে বড় ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। তার কি অপরাধ ছিল, আমি জানিনা। এর সুষ্ঠু বিচার ভারত- বাংলাদেশ সরকারের নিকট আপনাদের মাধ্যমে দাবি করছি। শীতল কোচের পিতা জানান, আমার ৮ ছেলের মধ্যে শীতল কোচ অত্যন্ত শান্ত এবং ভদ্র। স্থানীয় রাংটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র এবং অন্যান্য ছেলেরাও উচ্চ শিক্ষার লেখাপড়া অবস্থায় রয়েছে। এই শিশু ছেলেটি কখনো অন্যায় করেনি। হাতি তাড়ানোর উদ্দেশ্যে সীমান্তের নিকট বন্ধু-বান্ধবসহ যায়। তাকে ধরে নিয়ে অমানবিক ভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত লাশ হস্তান্তর করেছে আমাদের নিকট। যা আমি বাবা হয়ে সহ্য করে বুকে পাথর বেঁধে মৃত ছেলের কথা ভেবে ভেবে দিনাতিপাত করছি। আজ আমারই ভাগ্যের পরিহাস। যে শ্রাদ্ধ আমার ছেলে আমার জন্য করবে, সেই শ্রাদ্ধ বয়স্ক পিতা হয়ে শিশু পুত্রের জন্য করতে হচ্ছে আমাকে। এর চেয়ে মৃত্যু আমার অনেক ভাল। শ্রাদ্ধ চলাকালীন সময়ই আমরা তার বাসায় প্রবেশ করি। সাংবাদিকদের ক্যামেরা দেখে তার মা ৮ম শ্রেণীর সকল বই পুস্তক সামনে নিয়ে ছেলের কথা বলতেই কাতরিয়ে উঠে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মঞ্জুরুল হক জানান, শীতল কোচ ¯^ভাব চরিত্রে অত্যন্ত ভাল। লেখাপড়ার দিক দিয়েও ছিল অত্যন্ত ভাল। তার পরিবারের সবাই শিক্ষিত। খেলার অছিলায় অথবা বন্য হাতি তাড়া করতে গিয়ে ভারতীয় নাগরিকের কাছে নৃশংস ভাবে খুন হয়। যা সহজে মেনে নেওয়া যায়না। ফেলানীর মতো সুষ্ট ভাবে তদন্ত করে এর বিচার দাবী করছি। এলাকাবাসী জানান, নিহত দুই আদিবাসী পরিবারের মধ্যে চলছে শোকের মাতম। অতীতে কখনও এদের বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্যকলাপের কথা শোনা যায়নি।
ঝিনাইগাতীতে ভারতীয়দের হাতে নিহত দুই আদিবাসীর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম
Share This