জার্মানিতে ওয়েলনেস কেন্দ্রের ধুম

dw 260স্বাস্থ্য ডেস্ক :-  গত ২০ বছরে জার্মানিতে ‘ওয়েলনেস সেন্টার’-এর বিস্তৃতি এক লাফে ওপরে উঠে গেছে৷ আজগুবি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সিরিয়াস কেন্দ্রগুলিও মানুষকে আকৃষ্ট করতে সচেষ্ট৷ ম্যাসাজ থেকে শুরু করে খাবার-দাবারেও এর প্রতিফলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ ‘‘মানুষ ভালো বোধ করতে চায়৷ আর এই ভালোলাগার অনুভূতিটা পৌঁছে দেওয়া ও পথ দেখিয়ে দেওয়াটাই হলো ‘ওয়েলনেস সেন্টার’-গুলির কাজ৷” বলেন অল্ডেনবুর্গ শহরের জার্মান ওয়েলনেস অ্যাকাডেমির মার্গিট কেনেমুন্ড৷ তিনি হোটেলগুলিকে ওয়েলনেসের নানা দিক ও সর্বাধুনিক মান সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷ ওয়লনেস সেন্টারে আসা খদ্দেরদের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ এ কারণে এই কেন্দ্রগুলির প্রয়োজন দক্ষ কর্মী ও বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা৷ এক্ষেত্রে মার্গিট কেনেমুন্ডের অ্যাকাডেমি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়৷ বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করা -আমরা এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করি৷ এঁদের অনেকেই ভারত, হাওয়াই ইত্যাদি জায়গা থেকে আসেন, যেখানে ওয়েলনেসের গোড়াপত্তন হয়েছিল৷ এই বিশেষজ্ঞরা আমাদের অ্যাকাডেমিতে ক্লাস করান৷” এখানে আরো ১১টি বিষয় পড়ানো হয়৷ যেগুলি ওয়েলনেসের মধ্যে পড়ে৷ শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন, কীভাবে হাওয়াইতে ‘টেম্পলডান্স ম্যাসাজ’ করা হয়৷ পাশাপাশি মার্কেটিং সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া হয় তাঁদের৷ যেমন ম্যাসাজের কেবিনটি দেখতে কেমন হলে ভালো হয়৷ কোন তেল, কোন রং ও সংগীত ব্যবহার করা যায়৷ ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা পান তাঁরা৷ খাদ্য সচেতনতাও জরুরী-পরিবেশটি মোহনীয় হয়ে উঠলে মানুষ সেখানে নিজেকে সঁপে দিতে চাইবে৷ বলেন ওয়েলনেস অ্যাকাডেমির ম্যানেজার মার্গিট কেনেমুন্ড৷ ওয়েলনেস কেন্দ্রগুলির কাজকর্ম ও বেতন আকর্ষণীয় বলে প্রশিক্ষণ ইচ্ছুক আবেদনকারীর সংখ্যাও বাড়ছে৷সেমিনারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে২০ বছর আগে ১২টি সিটের একটি সেমিনারের অংশগ্রহণের জন্য ১০০ জন আবেদন করতেন৷ আজ ওয়েলনেস সেমিনারের সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে৷ তবু ৩০ জনের মতো ওয়েলনেস অ্যাকাডেমিতে আবেদন করেন, যাঁদের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে৷ পেশাগত শিক্ষা শেষ করে এখানে আসেন তাঁরা৷ শিখতে চান ম্যাসাজ, থেরাপি বা কসমেটিকসের কলাকৌশল৷ কোর্সের পর বেশ কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে অংশগ্রহণকারীদের৷ তবে সবাই যে পরীক্ষায় পাশ করে তা নয়৷ দূরপ্রাচ্যের য়েলনেসের চাহিদাখদ্দেররা দূরপ্রাচ্যের ওয়েলনেস উপভোগ করতে চান৷ ‘‘আয়ুর্বেদ ছাড়া কিছুই চলবেই না”, বলেন কেনেমুন্ড৷ মার্গিট কেনেমুন্ড মনে করেন ওয়েলনেস অবসর সময়ের এক উপভোগের বিষয়৷ কিন্তু জার্মানির অন্যতম স্বাস্থ্য সম্পর্কিত স্কুল ‘ইমপাল্স’-এর ম্যানেজার ফল্কার উলরিশের মতে ওয়েলনেসের বিস্তৃতি আরো অনেক দূর পর্যন্ত৷ ‘‘ওয়েলনেস হলো ভার বা চাপ মুক্ত হওয়ার এক পদ্ধতি৷ স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা তথা পুষ্টিকর খাওয়া দাওয়ার প্রতি নজর দিতেও শেখায় ওয়েলনেস৷ অর্থাৎ মানুষকে এমন এক পরিবেশে নিয়ে যাওয়া হয়,যেখানে সে ভালো বোধ করে৷ আঙুর স্বাস্থ্যের জন্য এত ভালো কেন? দেবতার রক্তসম্ভবত আঙুর প্রথম এসেছে কৃষ্ণসাগরীয় অঞ্চল থেকে৷ তবে আজকাল বেশিরভাগ আঙুর আসে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে৷ প্রাচীন গ্রিকদের কাছে পাঁচ হাজার বছর আগে থেকে আঙুরের তৈরি ওয়াইনকে ‘দেবতার রক্ত’ বলা হতো, যা আজও প্রতীকি চিহ্ন বহন করে৷

আঙুর স্বাস্থ্যের জন্য এত ভালো কেন?

আঙুরের বাগান

জার্মানিতে প্রচুর আঙুরের বাগান রয়েছে৷ সারা বিশ্বে যত রকম গাছের চাষ করা হয়, সেগুলোর মধ্যে আঙুর সবচেয়ে পুরনো৷

আঙুর স্বাস্থ্যের জন্য এত ভালো কেন?

সুন্দর ফল আঙুর

আঙুর শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, খেতেও সুস্বাদু ফল৷ তবে হালকা সবুজ রংয়ের আঙুর থেকে লাল বা গাঢ় সবুজ রংয়ের আঙুরে বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে৷ আঙুরে ভিটামিন সি তেমন না থাকলেও আঙুর ইনফেকশন থেকেও রক্ষা করতে সাহায্য করে৷ গরমকালে যথেষ্ট আঙুর খেলে শীতকালেও সুস্থ থাকা যায় – এমনটাও শোনা যায়৷

আঙুর স্বাস্থ্যের জন্য এত ভালো কেন?

আঙুর খেয়ে ওজন কমান

সপ্তাহ দুয়েক প্রতিদিন বিচি ও খোসাসহ ২ কেজি আঙুর আর সাথে যথেষ্ট পরিমাণে পানি বা গ্রিন চা পান করলে কয়েক কেজি ওজন কমানো সম্ভব৷ তবে সে আঙুর হতে হবে অবশ্যই কোনো রকম কেমিকেল ছাড়া পুরোপুরি অর্গানিক উপায়ে চাষ করা৷ আঙুরের বড় গুণ – শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের দেয়৷

আঙুর স্বাস্থ্যের জন্য এত ভালো কেন?

আঙুরে রয়েছে প্রচুর ফাইবার

আঙুরের খোসা এবং বিচিতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার, যা মানুষের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে৷ আঙুরে অনেক বেশি পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় যা শরীরের বাড়তি পানি কমিয়ে প্রয়োজনীয় পানির ভারসাম্য রক্ষা করতে ভূমিকা পালন করে৷

আঙুর স্বাস্থ্যের জন্য এত ভালো কেন?

আঙুর থেকে তৈরিরেড ওয়াইন

আমাদের সংস্কৃতিতে মদ খাওয়ার প্রচলন নেই, মদ শুনলেই অনেকে আঁতকে ওঠেন৷ এদেশে ডাক্তার বা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, সামান্য পরিমাণে রেড ওয়াইন খাওয়া খুবই ভালো৷ অর্থাৎ প্রতিদিন রাতে আধাগ্লাস থেকে একগ্লাস রেড ওয়াইন খেলে তা হার্ট ভালো রাখতে এবং শরীরের রক্ত চলাচলও ঠিক রাখতে সাহায্য করে৷ বলা বাহুল্য, রেড ওয়াইন তৈরি করা হয় আঙুর থেকেই৷

আঙুর স্বাস্থ্যের জন্য এত ভালো কেন?

অ্যান্টি এজিং

শুধু গ্রিন টি বা সবুজ চা নয়, আঙুরও তারুণ্য ধরে রাখতে এবং রূপ লাবণ্য বাড়তে সাহায্য করে৷ শুধু তাই নয় আঙুর ক্যানসার সেলগুলোর বৃদ্ধি কমাতেও সাহায্য করে থাকে৷ আঙুর খান, সুন্দর থাকুন৷
বে এটা শুধু নিষ্ক্রিয় পদ্ধতি নয়৷ সক্রিয়ভাবে ওয়েলনেসে অংশ নিতে হবে৷ দেহ, মন ও আত্মা এই তিনের সম্মিলনের ঘটাতে হবে৷বর্তমানে জার্মানিতে ওয়েলনেস বলতে লোকে বোঝে শুধু রিল্যাক্স করাকে৷ এই যেমন স্টিমবাথে যাওয়া, ম্যাসাজ নেওয়া ইত্যাদি৷ ফল্কার উলরিশের ওয়েলনেস কেন্দ্রে পরিপূর্ণতার ওপর জোর দেওয়া হয়৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মূল দর্শন হলো, কোর্সে অংশগ্রহণকারীদের বিচার-বিবেচনাকে জাগ্রত করা৷ কৌশলে শুধু অর্থ উপার্জনটাই যেন তাঁদের লক্ষ্য না হয়৷ তবে এক্ষেত্রে খদ্দেরদের সক্রিয় ও সচেতন হতে হবে৷ সবকিছুই প্রশিক্ষণকারীর ওপর ছেড়ে দিলে চলবে না৷এসেছে কয়েকটি শব্দ থেকে ‘ওয়েলনেস’ কথাটি এসেছে কয়েকটি শব্দ থেকে৷ একদিকে ‘ওয়েল বিয়িং’ অন্যদিকে ‘ফিটনেস ও হ্যাপিনেস’৷ ওয়েলনেসের উৎপত্তির পেছনে ছিল চিকিৎসাগত ও অর্থনৈতিক পটভূমি৷ ১৯৭০-এর দশকে মার্কিন সরকারের উদ্যোগে এক গবেষক টিম সামগ্রিক এক স্বাস্থ্য মডেল উদ্ভাবন করেন৷ কেননা, এই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে খরচের হার আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছিল৷ এ জন্য খাদ্যগ্রহণে সচেতনতা ও নিজস্ব দায়িত্ববোধের ওপর জোর দেওয়া হয়৷ যাতে চিকিৎসা বাবদ খরচ কমে আসে৷ আজ এটাকে ‘মেডিকেল ওয়েলনেস’ বলা হয়৷ শুধু অবসর বিনোদন নয়৷ সূত্র- DW.DE

 

Exit mobile version