এক টুকরো কাপড় দাও, যা মায়ের চোখ মুছবে

ddddddddddddddddddddddddddজি নিউজ বিডি ডট নেট ঃ- নির্বাচন শেষ৷ মন্ত্রিপরিষদ গঠন করাও শেষ৷ মন্ত্রিপরিষদ আর সরকারের সমালোচনা, প্রশংসা হচ্ছে৷ তবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এখনো লেখালেখি হচ্ছে হিন্দুদের ওপর বীভৎস হামলার বিষয়টি নিয়ে৷ এক ব্লগার আন্তরিকতার প্রশ্ন তুলেছেন৷ আমার ব্লগে শাহজাহান পারভেজ রনি তুলে ধরেছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কোনো আক্রমণ, উস্কানি ছাড়াই হিন্দুদের ওপর ব্যাপক হামলা চালানোর বিষয়ে মানবিক কিছু প্রশ্ন৷ তাঁর লেখার শিরোনাম, ‘‘মনিরামপুরের ক্ষত এবং নিরব রাষ্ট্র!  বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার মতো যশোরের মনিরামপুরেও হামলা হয়েছে হিন্দুদের ওপর৷ সংবাদমাধ্যমেও এসেছে মনিরামপুরের খবর৷ এমন হামলার নিন্দা জানানোর ভাষা খুঁজে পাননি রনি৷ লেখার শুরুতে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মনিরামপুর আমাদের কী শিখালো বা আমরা মনিরামপুরে কী করলাম! আমরা কি লজ্জায় ডুবেছি একটি বারও? কিংবা লজ্জায় আত্মহত্যা করেছি ক’জন? ক’জন চোখের জল ফেলেছি? এ ঘটনায় দেশ নিয়েই তাঁর আক্ষেপ, দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির ধর্মের মূল চেতনা বিরোধী নিষ্ঠুরতা ব্যথিত করেছে তাঁকে, হতাশ করেছে৷ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন সংখ্যালঘুদের অনেকেই-হতাশা থেকে শাহজাহান পারভেজ রনি লিখেছেন, ‘‘বুঝতে পারছি, আমরা যা চেয়েছিলাম, যা চাই কিংবা যা চাইবো, তা অধরাই থেকে যাবে! কি চেয়েছি – একটা দেশ! চাওয়াটা তা বেশি ছিল না! দু’শো বছরের পরাধীনতার আবর্ত থেকে বের হয়ে কিংবা পঁচিশ বছরের শোষন থেকে মুক্তি লাভ; কী এমন শিক্ষা দিল আমাদের? এর চেয়ে তো প্রাচীন, আদিম হয়ে থাকাই ভালো ছিল! বাংলাদেশে এবার হিন্দুদের ওপর বর্বোরোচিত হামলার ঘটনা শাহজাহান পারভেজ রনিকে মনে করিয়ে দিয়েছে একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী আর তাদের দোসর রাজাকার-আলবদর-আল শামসদের বর্বরতার কথা৷ রনি তাই লিখেছেন, ‘‘তথাকথিত সভ্য দেশে যা দেখলাম বা দেখছি, তা কি ১৯৭১-এর অসভ্যতার রিহার্সেল নয়?” ব্লগার রনি মনে করেন, ‘‘মনিরামপুর থানা৷ আমার বোন, আমার মা, আমার বধু….যেভাবেই বলি না কেন – তাকে হত্যা করা হলো৷ হত্যা? আমি তো ওটাকে হত্যাই বলবো৷ আমার সভ্যতাকে হত্যা করা হলো, আমার মনকে হত্যা করা হলো, আমার বিশ্বাসকে হত্যা করা হলো, আমার চেতনাকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করা হলো! আমার মায়ের লজ্জা হরণ করা হলো! আমার কী অবশিষ্ট রইলো আর!”মায়ের চেয়ে বড় কিছু আর নেই – সবার জানা এই কথাটি মনে করিয়ে দিয়ে আমার ব্লগের এই ব্লগার মাকে তুলনা করেছেন উপাসনালয়ের সাথে৷ তাঁর মতে, ‘‘মা আমার মসজিদ, মা আমার মন্দির, মা আমার গির্জা-প্যাগোডা! নেই নিরাপত্তাকর্মীর সাড়া যশোরের অভয়নগরের চাপাতলী গ্রামের প্রবেশপথে পুলিশের সতর্ক অবস্থান৷ গত ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের দিন এই গ্রামের নিম্নবর্ণের হিন্দু অধ্যুষিত মালোপাড়ায় বসবাসরতদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে৷ আক্রান্তরা জানান, ঘটনাস্থলের মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে থানার অবস্থান হলেও অনেক ফোন করেও সে সময়ে পুলিশ কিংবা কোনো নিরাপত্তাকর্মীর সাড়া মেলেনি৷

মালোপাড়ার হিন্দুদের কান্না থামেনি

নদী ঠাকুর

দুর্বৃত্তদের হামালায় লণ্ডভণ্ড মায়া রানি বিশ্বাসের একমাত্র মাথা গোঁজার ছোট্ট নিবাস৷ সেদিন হামলা শুরু হলে পাশের বুড়ি ভৈরব নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ওপারে উঠে প্রাণে বেঁচে যান বিধবা এই নারী৷ তাঁর ভাষায় ‘নদী ঠাকুর’ সেদিন না থাকলে জানটা হয়ত থাকতো না৷

প্রাণ বাঁচাতে নদীতে

নিজের ঘরের ভাঙা আসবাব, টেলিভিশনের পাশে মালোপাড়ার গৃহবধু উজ্জ্বলা বিশ্বাস৷ হামলাকারীদের ভয়াবহ রূপ সামান্য দেখেছিলেন তিনি৷ প্রাণ বাঁচাতে তিনিও ঝাঁপ দেন বুড়ি ভৈরবে৷ হামলার সময়ে তাঁর মনে হয়েছিল যে ভগবান সেদিন পাশে ছিলেন না৷

বইপত্র পুড়িয়ে দিয়েছে

কলেজ পড়ুয়া মঙ্গলা বিশ্বাসের বই-পত্র, এমনকি সার্টিফিকেটও পুড়িয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা৷

সুন্দর স্বপ্নে চির

হামলাকারীদের ভেঙে দেয়া আয়নায় কলেজ পড়ুয়া মঙ্গলা বিশ্বাসের প্রতিবিম্ব৷ বাড়ির দেয়ালে টাঙানো এই ভাঙা আয়নার মতোই মঙ্গলার সুন্দর স্বপ্নেও চির ধরিয়েছে হামলাকারীরা৷ মঙ্গলার আক্ষেপ, তাঁর বই-পত্র আর সার্টিফিকেট কী দোষ করলো?

মালোপাড়ার হিন্দুদের কান্না থামেনি

আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয়

হামলার ছয় দিন পরে এঁরা ফিরছেন বাড়িতে৷ হামলার সময় পার্শ্ববর্তী গ্রামে আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরা৷

হামলার প্রত্যক্ষদর্শী

৮৬ বছর বয়সি মৃত্যুঞ্জয় সরকার সেদিনের হামলার প্রত্যক্ষদর্শী৷ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও দেশ ছাড়েননি তিনি৷ কিন্তু হামলার পর তাঁর মনে হচ্ছিল যে, সে সময়ে ছেড়ে যাওয়াটাই উচিত ছিল তাঁর৷

গাছও রেহাই পায়নি

বাড়ি-ঘরের পাশাপাশি মালোপাড়ার গাছও জ্বালিয়ে দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা৷

পলাতক জামায়াত নেতা

মালোপাড়ায় হামলার পরে চাপাতলী গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রাম বালিয়াডাঙ্গায় স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর থানা আমীর মাওলানা আব্দুল আজিজের বাড়ি ভাঙচুর করে যৌথবাহিনী৷ ঘটনার আগে থেকেই পলাতক রয়েছেন এ জামায়াত নেতা৷

আক্রান্তদের অভিযোগ

জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আব্দুল ওহাব৷ মালোপাড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার জন্য জামায়াত শিবির ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলকেও দায়ী করেছেন অনেকে৷ সাবেক এই সাংসদ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়েছেন৷ সেখানে নতুন প্রার্থী হিসেবে রণজিৎ রায় মনোনয়ন পাওয়ায় এই দুই জনের সমর্থকদের মাঝে বেশ উত্তেজনা ছিল পুরো নির্বাচনের সময়টায়৷

গণধর্ষণ

যশোরের আরেক ভয়াল জনপদ মনিরামপুর উপজেলার হাজরাইল গ্রামের দাসপাড়ার বাসিন্দা অনারতী দাস৷ ৭ জানুয়ারি রাতে তাঁর সামনেই অস্ত্রের মুখে একদল দুবৃত্ত গণধর্ষণ করে পুত্রবধু মনিমালা দাস আর ভাতিজি রূপালী দাসকে৷

ভয়াবহ দৃশ্যের প্রত্যক্ষদর্শী

কার্তিক দাসকেও সেদিন রাতে সেই ভয়াবহ দৃশ্যের প্রত্যক্ষদর্শী হতে হয়েছিল৷ দাসপাড়ায় গণধর্ষণের শিকার নিম্নবর্ণের হিন্দু মনিমালা দাসের শ্বশুর ও রূপালী দাসের চাচা তিনি৷

বাড়িঘর ছেড়েছেন

দাসপাড়ায় গণধর্ষণের শিকার হওয়া পরিবার দুটি আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়েছেন৷

শুধুই আতঙ্ক

দাসপাড়ার এক নারী৷ দাসপাড়ার নারীদের এখন নির্ঘুম রাত কাটে আতঙ্কে৷
প্রতিবেদন: নুরুননাহার সাত্তার | সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

লেখার শেষ অংশে বাংলাদেশের সুশীল সমাজের বড় একটা অংশকে হিন্দুদের ওপর হামলার বিষয়ে নীরব থাকতে দেখে শাহজাহান পারভেজ রনি লিখেছেন, ‘‘আমাদের বুদ্ধিজীবী, সুশীল নামক বড় টাকওয়ালা, লম্বা বাবরিওয়ালা মানুষগুলো, যারা গোলটেবিল বা লম্বাটেবিল বৈঠকের নামে সেই কলাবাগানের সতীর মতো ধর্মের কথা, ন্যায়ের কথা বলে, তাদের ঘরে যে রমণী, যে মা কিংবা যে কন্যা সারাটা সময় মমতার চাদরে আবৃত করে রাখে সংসার নামক একটি জীবন ইস্কুল, তাদের মতোই তো মনিরামপুরের সেই মা; সেই নারী! তাদের মুখে তো কোনো উচ্চবাচ্য শুনি না! তাহলে কি ধরে নেব, একাত্তর তাদের কিছই শেখায়নি! নাকি মেনি মুখো কুকুর হয়ে যায় যখন এসব ঘটে যায় কোনো এক সেমিনারের ফাঁকে! এ দেশের সকল শিশু হবে পাক পাকিস্তানের, এ জমিন করে দিয়ে যাবে পাকিস্তানের বীজে উর্বর – এ কথাগুলো বিস্মৃত হওয়ার কথা ছিল, কারণ ওরা নেই! তাহলে আজও কেন এ পবিত্র রক্তে ভেজা মাটিতে হিংস্রতার,আদিমতার বুনো কর্ষণ! ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে সমাজে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানোর পাকিস্তানি কৌশল উল্লেখ করে রনি প্রশ্ন রেখেছেন, ‘‘আমরা কি এখনো চার-পেয়ো জানোয়ার হয়েই আছি? আমরা কি পাক-সার জমিন সাদ-বাদ বুকে তুলে নিচ্ছি? এ দেশ কোন পথে এগিয়ে যাচ্ছে? রাষ্ট্র কি আমাদেরই আছে, নাকি….রাষ্ট্র এখন চার পেয়োদের গোয়াল ঘর,সাম্প্রদায়িক শক্তির ক্রমাগত শক্তি প্রদর্শন রোধে ইতি টানার দাবিও জানিয়েছেন শাহজাহান পারভেজ রনি৷ তাঁর সন্তানের জন্য দেশ আর বাসপোযোগী থাকছে না – এই বিশ্বাস থেকে রনি দাবি করেছেন, ‘‘আমাকে এক টুকরো কাপড় দাও, যে কাপড় আমার মায়ের চোখ মুছবে, যে কাপড় আামার বোনের লজ্জা ঢাকবে! আমি বাঙালি, আমি জয় বাংলার লোক – এ কথা বললেই আমাকে মেরে ফেলা হবে না; গ্যারান্টি চাই৷ ভোট দিয়ে ….সিক্ত হবে না আমার মা, আমার বোন – এ নিশ্চয়তা চাই৷ আমার ব্লগের এই ব্লগার লেখাটি শেষ করেছেন স্বপ্ন দিয়ে, তিনি লিখেছেন, ‘‘এ রাষ্ট্রকে আমরা আবার ঢেলে সাজাবো, আমার মা আবার হাসবে, আমার বোনের শরীরের ক্ষত শুকিয়ে চেতনার আবরণ আসবে তার বুকে৷ আমার কাবা, আমার মন্দির, আমার মসজিদ আবার জেগে উঠবে৷ এমন সংবিধান আনবো যে সংবিধান দেবে স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা৷ এ ঘুণেধরা সমাজ বদলে দেবো আমরাই, কারণ আমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ! সূত্রDW.DE

 

Exit mobile version