অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে ঃবরিশালের আগৈলঝাড়াসহ এর আশেপাশেও এখন মুদি দোকানেও বিক্রি হচ্ছে মরণ নেশা ইয়াবা! নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারীদের কাছ থেকে। গ্রেফতার বা পুলিশী অভিযান মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের এতটুকু দমন করতে না পারায় অভিভাবকরা তাদের ছেলে সন্তানদের নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছেন। তারা মাদকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যাপক অভিযান পরিচালনার অনুরোধ করেছেন। উপজেলার বিভিন্নস্থানে দীর্ঘদিন ধরে অবাধে গাঁজা, ভাং, ড্যান্ডি, ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সহজলভ্য হওয়ায় উঠতি বয়সের তরুণও যুবসমাজ মাদকের মরণ নেশায় বুদ হয়ে এখন মাদকের বশ্যতা স্বীকার করেছে। অনেক আগেই এলাকায় ইয়াবা বি¯তৃতি লাভ করলেও পুলিশ তা অস্বীকার করে আসছিল।
২০১১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাতে উপজেলার পয়সারহাট গ্রামের আ. রব মিয়ার ছেলে ঝন্টু মিয়াকে (২৪) প্রায় ২ কেজি গাঁজা ও ৮০ পিস ইয়াবা বিক্রির সময় পয়সারহাট ব্রিজের পশ্চিমপাশ থেকে প্রথমবার হাতেনাতে গ্রেফতার করেছিল এসআই ইদ্রিস। এব্যাপারে মামলাও হয়েছিল। এরপর থেকে প্রশাসন ইয়াবা বিক্রি ও সেবনের দায় স্বীকার করে। ঝন্টু গ্রেফতারের পর অল্প সময়ের জন্য এলাকায় স্বস্তি ফিরে এলেও অপর ব্যবসায়ীরা থেমে নেই। ওই সময় গ্রেফতারকৃত ঝন্টু পুলিশকে জানিয়েছিল মাদক ব্যবসার সাথে এক যুবলীগ নেতার ভাই জড়িত। ঝন্টু গ্রেফতারের পরই মিজান লাপাত্তা হয়েছিল। আর এখন সেই ভয়াবহ মরণ নেশা ইয়াবা এখন সদর বাজারের মুদি দোকানেও পাওয়া যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব মাদকদ্রব্য পার্শ্ববর্তী কোটালীপাড়া ও কালকিনি উপজেলার মাদকের ডেরা থেকে আনা হয় বলেও জানা গেছে। প্রশাসন মাঝে মধ্যে বিভিন্ন স্পট থেকে অভিযান চালিয়ে মাদক বিক্রেতাদের গ্রেফতার করলেও কয়েকদিনের মধ্যেই তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে নব উদ্দমে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, গাঁজা, ফেন্সিডিলের পাশাপাশি বর্তমানে ড্যান্ডি নামে নেশা জাতীয় দ্রব্য সহজলভ্য ও সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মাদকের তালিকায় স্থান পেয়েছে। বিভিন্ন সরকারের সময় রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে কিছু সরকার দলীয় প্রভাবশালীদের মদদে উপজেলার বিভিন্নস্থানে মাদক বিক্রির সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে।
উপজেলার গুরুত্বপূর্ন মাদক বিক্রি ও সেবনের কয়েকটি চিহ্নিত স্পট হচ্ছে- গৈলা হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা, গৈলা বাজারের ২-৩টি জায়গা, গৈলা এতিমখানার পাশে মতি সরদারের বাড়ি, উপজেলা সদরের হেলিপ্যাড, থানার উত্তরপাশের টেম্পোস্ট্যান্ডসহ ২-৩ জায়গা, উপজেলা সদরের কালীখোলা এলাকা, কেজি স্কুলের পশ্চিমপাশে, পয়সারহাটের পূর্ব ও পশ্চিমপাড়ের ভ্যানস্ট্যান্ড, বাগধা, পাকুরিতা স্কুল এলাকা, বাকাল নওপাড়া গ্রামের ছেলে শুক্কুর মোল্লার বাড়ি, জোবারপাড়-নাঘিরপাড়ের ব্রিজ ও স্কুল এলাকা, বড়মাগরা উত্তরপাড়, আস্কর বাঁশতলায় আয়নাল ও কবিরের বাড়ি, কান্দিরপাড়ে সোহাগ মেকার, ছয়গ্রাম বন্দর, মিশ্রিপাড়া হাট ও ¯øুইজগেট, কালুরপাড়, সাহেবেরহাটে মন্টু ভুঁইমালি, রাজিহার আলোশিখা এলাকা, মাগুরা বাজার, ভালুকশী, রামেরবাজার, রামানন্দেরআঁকসহ আরও কয়েকটি জায়গায় প্রতিনিয়ত মাদকবিক্রি ও সেবন চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টেকেরহাটে পুলিশী চেকপোস্ট বসার কারণে মাদক পাচারকারীরা আগৈলঝাড়ার আশেপাশে কোন পুলিশী চেকপোস্ট না থাকায় নিরাপদ ট্রানজিট হিসেবে এ রুটটি অধিক নিরাপদ হিসেবে ব্যবহার করছে। যশোর-গোপালগঞ্জ থেকে মাদকের চালান পয়সারহাট-আগৈলঝাড়া হয়ে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল যোগে বরিশাল সদরসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় অভ্যন্তরীণ রুটে পাচার হচ্ছে। পয়সারহাটে মাদকসহ ঝন্টু গ্রেফতারের পর মাদক ব্যবসায়ীরা রামশীল থেকে রাজিহার ও চাঁদশী হয়ে গৌরনদী এবং রাজিহার থেকে ঘোষেরহাট রুট ব্যবহার করছে। গৌরনদীর ঘোষেরহাট ঠাকুরবাড়ি মাদকের অন্যতম একটি জমজমাট বিক্রয় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। ওই এলাকার বিক্রেতারা বাশাইল ওয়াপদা এলাকায় ভ্রাম্যমাণ মাদক বিক্রির বিভিন্ন ষ্পট গড়ে তুলেছে। সূত্রটি আরও জানিয়েছে, আগৈলঝাড়ায় বর্তমানে গাঁজা, ফেন্সিডিলের পাশাপাশি যৌণ উত্তেজক ইয়াবাও পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে ছাত্রলীগ নামধারী কতিপয় কর্মীরা এব্যবসা করছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। এসব স্থানে উঠতি কিছু রাজনৈতিক পাতিনেতা অবাধে মাদকের বিক্রয় ও ব্যবহার চলছে। প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলেও তাদের ব্যবসা বন্ধসহ হরহামেশাই তাদের গ্রেফতারের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছেনা।